গযব / গদ্বব শব্দের অর্থ ক্রোধ, রাগ, Wrath, Anger. আল্লাহ আবার রাগেন? জি। ক্রোধ আল্লাহর সিফাত। আল্লাহ স্বয়ং নিজের জন্য যেসব সিফাত/গুণ সাব্যস্ত করেছেন। আমরাও সেগুলো সাব্যস্ত করি। কিন্তু এগুলোর ধরণ জানি না। এবং এগুলো আমাদের সদৃশ নয়। যেমন কালাম, আল্লাহ কথা বলেন। তিনি জানিয়েছেন তিনি কথা বলেন, আমরাও মেনে নেব তিনি কথা বলেন। কিন্তু কীভাবে বলেন তা জানিনা, সেটা সৃষ্টির ধরনের না। আমাদের যেমন ফুসফুসের বাতাস বেরোতে থাকে আর দাঁত জিহ্বা ঠোঁটে ধ্বনি উচ্চারণ করে কথা বলি, তাঁর কথা এমন না। কেমন, আমরা জানি না। তবে আমাদের সদৃশ না। ওয়ালাম ইয়াকু্ল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ। তাঁর কেন সদৃশ নেই। তিনি অমুখাপেক্ষী, কথা বলার জন্য তিনি ফুসফুস-জিহ্বা এগুলোর মুখাপেক্ষী নন। এগুলো সৃষ্টির লাগে, স্রষ্টার লাগে না।

- আমাদের আল্লাহ জড়বস্তু নন। তিনি জীবিত, চিরঞ্জীব (আল হাইয়্যু)

- তিনি সৃষ্টিজগতের প্রতি উদাসীন নন। তিনি কেয়ারিং। তিনি সব দেখছেন (বাছীর), সব শুনছেন (সামিউ), সব খবর রাখছেন (খাবীর)

- তিনি সৃষ্টিকে ভালোবাসেন (রউফ), স্নেহ করেন (ওয়াদুদ) মাতৃপেক্ষা বেশি।

- তিনি রহম করেন জালেম-মজলুম সবাইকে (রাহমান), জালেমের উপর ধৈর্য ধারণ করতেই থাকেন (হালীম/সবুর)

- মাফ করেন (গফুর), সর্বোচ্চ পর্যায় অব্দি মাফ করতে থাকেন (গাফফার)

- আবার তিনি প্রতিশোধ নেন (যুনতিক্বাম), ক্রোধান্বিত হন (কাহহার)। ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে জালেমের উপর তিনি প্রতিশোধ নেন। মজলুমের পক্ষে।

- তবে তাঁর রহম তাঁর ক্রোধের উপর বিজয়ী।

- তিনি ইনসাফ করেন (আদল), ক্রোধে তিনি সৃষ্টির মত ন্যায়হরণ করে বসেন না।

- তিনি চান আমরা ভালো থাকি, সুখে থাকি। ন্যায় করি। অন্যায় করে তাঁর গযব ডেকে না আনি। এজন্য তিনি আমাদের সাথে কমিউনিকেট করেন। নবীদের মাধ্যমে কিতাব পাঠিয়ে সতর্ক করেন। কীভাবে চলতে হবে জানান। আমার জমিনে আমার দেখানো নিয়মে চলো, তোমরাও ভালো থাকো, আমার সৃষ্টিকেও ভালো থাকতে দাও। আমার অবাধ্য হয়ো না। 'আমার ক্রোধ তোমরা সহ্য করতে পারবে না, তারপরও তোমরা অবাধ্য হচ্ছো?'

- তিনি স্বত্বাধিকারী (মালিক), শাসক (হাকাম), অধিকারী (রাব্ব)

সুতরাং ক্রোধ আল্লাহর সিফত/গুণ। তিনি জড় নন, নির্জীব নন, বেখেয়াল নন। বান্দারা সীমা অতিক্রম করে ফেললে তিনি গযব পাঠান। কেন? 'বড় আযাব (পরকালে)-এর আগে আমি তাদেরকে ছোট কিঞ্চিৎ শাস্তি (দুনিয়াতে) আস্বাদন করাই, যাতে তারা ফিরে আসে'। ফেরানোর জন্য। মুমিনদের আল্লাহ আযাব পাঠান ফেরানোর জন্য। আর কাফিরদের পাঠান ধ্বংসের জন্য। কাফিরদের জন্য কখন পাঠান? সুযোগের পর সুযোগ দেন। তাদের কুফরের জন্যও দেন না, শিরক সবচেয়ে বড় গুনাহ। এজন্যও আযাব পাঠান না। কাফেরের কুফর, মুশরিকের শিরকের শাস্তি জাহান্নামে অনন্তকাল চলবে। দুনিয়ায় আল্লাহ তাদের আরাম-আয়েশের সুযোগ দেন। বেশি করে দেন। তাহলে দুনিয়ায় গযব কখন আসে? দেখেন:

★ নূহ আ. এর জাতিকে সাড়ে ৯০০ বছর সুযোগ দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত তারা নূহ আ. কে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। চূড়ান্ত স্পর্ধা। দূতকে হত্যার হুমকি?

★ আদ জাতিকে ধরেছেন যখন তারা স্পর্ধা দেখিয়েছে: আমাদের চে' শক্তিশালী আবার কেডায়?

★ সামুদ জাতির দাবিমত পাথরের ভিতর থেকে উট বের করে দেখিয়েছেন আল্লাহ। সেই উটের স্পেশাল নাম দিয়েছেন 'নাক্বতুল্লাহ' (আল্লাহর উট)। এতকিছু চোখের সামনে দেখেও সেই উটকে তারা হত্যা করেছে। কতবড় স্পর্ধা।

★ ফিরআউন কতশত বছর বনী ইসরাঈলকে জুলম করেছে। মায়ের কোল থেকে ছেলে বাচ্চাকে নিয়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ করেছে। আল্লাহ শাস্তি দেননি। অবশেষে চূড়ান্ত স্পর্ধা দেখিয়েছে ফিরাউন: 'আমি তোমাদের সবচে' বড় রাব্ব নই?'

★ কওমে লূত শিরক করেছে, সমকাম করেছে শত শত বছর। আল্লাহ ধরেননি। কখন ধরেছেন? যখন তারা স্পর্ধা দেখিয়েছে: লূত, তোমাকে আমরা বের করে দেব, বেশি সুশীল হয়েছো, খুব পবিত্র হয়েছো, না? তারা জানতো তারা নাপাক কুৎসিত একটা কাজ করছে। সেটা জেনেই তারা করছে ও করবে। পারলে লূত কিছু কইরো।

★ কারুন তো মুসলিমই ছিল। যাকাতের হুকুম হয়েছে। সে দিলো তো না-ই, স্পর্ধা দেখালো: এগুলো আল্লাহ দিয়েছেন নাকি, এগুলো তো আমি নিজ যোগ্যতায় কামিয়েছি।

আল্লাহর গযবের একটা কমন প্যাটার্ন দেখেন: স্পর্ধা, অহংকার। শিরক-কুফর-জুলম সব আল্লাহ ছাড় দিয়েছেন দুনিয়াতে। গযবের এপিসেন্টার হল এই ঔদ্ধত্য, স্পর্ধা, অহংকার, বড়াই। সভ্যতার চূড়ায় থাকা জাতিগুলো যখন আল্লাহর যমীনে আল্লাহর সাথে স্পর্ধা দেখিয়েছে, আল্লাহর ক্রোধ আপতিত হয়েছে। আমি জানি আপনাদের মনে অনেক প্রশ্ন জাগছে। যদি আল্লাহর গযব-ই হয়, তাহলে মোছলমান মরে কেন রে ব্যাটা?