১৫। সূরা হিজর, আয়াত ২ থেকে ৯৯
কিয়ামাতের দিন কাফিররা আফসোস করবে তারা যদি ঈমানদার হয়ে যেত। দাওয়াহ দেওয়ার পরও দুনিয়ায় তারা ভ্রান্তিতে পড়ে থাকতে চাইলে তাদের সেভাবেই ছেড়ে দিতে বলা হয়।
কাফিররা রাসূলকে (সাঃ) উন্মাদ বলত। আল্লাহ জানিয়ে দেন যে পূর্ববর্তী নবীদেরও এসব বলা হত। কাফিরদের জন্য আসমানের দরজা খুলে দিয়ে তাতে চড়ার অনুমতি দিলেও তারা সেটাকে জাদু বলে অস্বীকার করে বেঈমানই থাকত।
আসমান-জমিনে আল্লাহ সকল মাখলুকের জন্য যে বিপুল রিযক ছড়িয়ে রেখেছেন, তা স্মরণ করানো হয়।
ঠনঠনে মাটি থেকে আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি থেকে শুরু করে ইবলীসের অহংকার করে বিতাড়িত হওয়া পর্যন্ত ঘটনা বর্ণিত হয়। ইবলীস সকল মানুষকে পথভ্রষ্ট করার হুমকি দেয়। কিন্তু আল্লাহর প্রকৃত বান্দাদেরকে যে সিরাতুল মুস্তাকীম থেকে টলাতে পারবে না, তা নিজেই স্বীকার করে।
শয়তানের অনুসারীদের একেকদল জাহান্নামের সাত দরজার একেকটি দিয়ে ঢুকবে। আর মুত্তাকীরা জান্নাতে থাকবে যেখানে তাদের মনের দুঃখকষ্ট সব দূর করে দেওয়া হবে, সকলে মিলেমিশে থাকবে।
ইবরাহীম (আঃ) এর ঔরসে বৃদ্ধ বয়সে ইসহাক (আঃ) এর জন্মের সুসংবাদ আনয়নকারী ফেরেশতাদের ঘটনা বর্ণিত হয়। সেখান থেকে এই ফেরেশতারা লূত (আঃ) এর কওমের নিকট আযাব নিয়ে যান। এছাড়া শুআইব (আঃ) এর কওমও আযাবে ধ্বংস হয়। উভয় কওমের বাসস্থানই (সাদ্দুম ও মাদায়েন) মানুষের চলাচলের পথের পাশে। মানুষ যেন এসব দেখে শিক্ষা নেয় যে আল্লাহর অবাধ্যতার পরিণাম কী হয়। আর সামূদ জাতির বাসস্থান ছিল হিজর, যেখানে তারা পাহাড় কেটে সুদৃঢ় বসতি বানিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে আল্লাহর নাফরমানি করত। আযাবে ধ্বংস হওয়ার সময় এসব ঘরবাড়ি তাদের কোনো কাজে আসেনি।
কাফিরদের দুনিয়ার ভোগবিলাসের উপকরণকে পরোয়া না করতে, মুমিনদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে, প্রকাশ্যে দাওয়াহ দিতে, মুশরিকদের পরোয়া না করতে, বিপদ ও মানসিক অশান্তির সময় আল্লাহর হামদ ও তাসবীহ পাঠ করতে এবং সালাত আদায় করতে এবং মৃত্যু পর্যন্ত ইবাদাত করে যেতে বলা হয়।
১৬। সূরা নাহল
মুসলিমদের বিজয় ও কাফিরদের পরাজয়ের ভবিষ্যৎবাণী শুনে কাফিররা ঠাট্টা করত। সূরা নাহলের শুরুতে সে অবশ্যম্ভাবী ভবিষৎবাণী শক্তভাবে পুনঃব্যক্ত করা হয়েছে। সামান্য শুক্রবিন্দু হতে সৃষ্ট মানুষ কীভাবে একসময় প্রকাশ্য বিতণ্ডাকারী হয়ে যায়, তার তিরস্কার করা হয়েছে।
মানুষের প্রতি আল্লাহর বিবিধ নিয়ামাতের কথা স্মরণ করানো হয়েছে ও তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে বলা হয়েছে। পালিত পশু, বৃষ্টি, উদ্ভিদ, ফসল, রাতদিনের আবর্তন, চাঁদ, সূর্য, নক্ষত্র দ্বারা পথ চেনা, সমুদ্র তলের খাদ্য ও ধনভাণ্ডার, নৌযান ইত্যাদি নিয়ামাত গুনে শেষ করা যাবে না। সবই আল্লাহর দান, মিথ্যা উপাস্যরা এর কিছুই সৃষ্টি করেনি।
কাফির নেতা ও অনুসারীদের আখিরাতের পরিণতির কথা বলা হয়েছে। পূর্ববর্তী জাতিসমূহের কাফিররাও একইরকম অবাধ্যতা করত, ফলে অপ্রস্তুত অবস্থায় তাদের ওপর আযাব চলে আসত।
জান কবজ করার সময় কাফির ও মুত্তাকীদের অবস্থার পার্থক্য বর্ণিত হয়েছে। উল্লেখ্য, এসব জায়গায় কাফিরদের অহংকারী বৈশিষ্ট্যের কথা বারবার উল্লেখিত হয়েছে।
জমিনে বিচরণ করে দেখতে বলা হয় নবীদের অস্বীকারকারী জাতিসমূহের কী অবস্থা হয়েছিল। তাদের কাছে মানুষদেরকেই নবী করে পাঠানো হতো।
কাফিররা আখিরাতের অস্তিত্ব অসম্ভব মনে করে। অথচ আল্লাহ কোনোকিছু হওয়ার হুকুম করলেই তা হয়ে যায়।
আল্লাহর আযাব অকস্মাৎও আসতে পারে, ক্রমশও আসতে পারে।
আল্লাহর রাস্তায় কাজ করতে গিয়ে নিপীড়িত হয়ে নিজ ভিটেমাটি থেকে হিজরত করা লোকদের দুনিয়া ও আখিরাতে উত্তম রিযকের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
সকল প্রাণী ও ফেরেশতা আল্লাহকেই সিজদাহ করে। সকল নিয়ামাত আল্লাহর দেওয়া। বিপদে পড়লেও মানুষ তাঁকেই ডাকে। আল্লাহ বিপদ দূর করে দিলে এরাই আবার শির্ক করে।
কাফিররা কিছু ফেরেশতা ও দেবীদের আল্লাহর কন্যা বলত। অথচ নিজেদের কন্যাসন্তান হলে কোথায় মুখ লুকাবে, নাকি একে মাটিতেই পুঁতে ফেলবে এ নিয়ে অস্থির হয়ে পড়ত।
মৃতভূমিতে বৃষ্টির মাধ্যমে প্রাণসঞ্চারের মাঝে আখিরাত অস্বীকারকারীদের জন্য চিন্তার খোরাক দেওয়া হয়।
আল্লাহর দেওয়া গবাদি পশু, ফল ও মৌমাছি থেকে প্রাপ্ত পানীয় এবং স্ত্রী-সন্তানের নিয়ামাত স্মরণ করানো হয়।
মানুষ নিজেরাই নিজেদের দাসদাসীদের এমনভাবে দান করে না যাতে দাস-মনিব সমান হয়ে যায়। অথচ আল্লাহর দাসদের ঠিকই আল্লাহর সাথে শরীক করে।
মুশরিকরা কুযুক্তি দিত যে দুনিয়ার কোনো বাদশাহ একা একা রাজ্য চালায় না, আল্লাহও বিভিন্ন দায়িত্ব সেরকমভাবে দেবদেবীদের হাতে ন্যস্ত করেছেন। আল্লাহ তাঁর বিভিন্ন সৃষ্টির সক্ষমতার মাঝে পার্থক্য দেখিয়ে প্রমাণ করে দেন যে সৃষ্টিকূলের মাঝেই এত পার্থক্য থাকলে স্রষ্টার (আল্লাহ) সাথে সৃষ্টির (দুনিয়ার বাদশাহ) তুলনা নিতান্ত বোকামি।
ভাসমান পাখি, মানুষের স্থায়ী ঘর, পশুর চামড়া থেকে তৈরি অস্থায়ী ঘর, অন্যান্য অঙ্গ থেকে পাওয়া তৈজসপত্র, গাছ-পাহাড়ের ছায়া, খনিজ থেকে বানানো বর্ম ইত্যাদি নিয়ামাত স্মরণ করানো হয়।
কিয়ামাতের দিন নবীগণ তাঁদের উম্মাহর কাফিরদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবেন। কাফিররা সেদিন তাদের মিথ্যা উপাস্যদের গালাগাল করতে থাকবে।
মুমিনদের জীবনে অবশ্য অনুসরণীয় কিছু গুণাবলীর কথা বলা হয়। ন্যায়বিচার ও দয়া করা, আত্মীয়ের হক প্রদান, অশ্লীলতা ও জুলুম না করা, অঙ্গীকার পূর্ণ করা। অঙ্গীকার ভঙ্গ না করার জন্য চমৎকারভাবে নসীহত করা হয়।
কুরআন পড়ার সময় আ'উযুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বনির রজীম পড়ার হুকুম করা হয়।
কোনো আয়াত বা বিধান রহিত করে নতুন আয়াত বা বিধান আনয়নের হিকমত বর্ণিত হয়েছে।
মুশরিকরা অপবাদ দিত যে রাসূল (সাঃ)-কে অমুক ব্যক্তি কুরআন শিখিয়ে দেয়। অথচ ওই ব্যক্তি নিজেই এক আরবি না জানা অনারব।
স্বেচ্ছায় কুফরিকারীদের আযাবের কথা বলা হয়েছে। যাদেরকে নিপীড়ন করে মুখে কুফরি কথা বলতে বাধ্য করা হয়েছে, তাদের কথা আলাদা। নিপীড়িত হওয়ার পর হিজরত ও জিহাদ করা ব্যক্তিদের মাগফিরাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।
আহলে কিতাব ও মুশরিকদের মনগড়া হালাল-হারামের বিধান নাকচ করে প্রকৃত হালাল-হারামের বিধান এবং অপারগ অবস্থার বিধান বর্ণিত হয়েছে।
আহলে কিতাব ও আরব মুশরিক- সকলের সম্মানের পাত্র ইবরাহীম (আঃ) ছিলেন বিশুদ্ধ তাওহীদবাদী।
উত্তম পন্থায় দাওয়াহ প্রদানের নিয়ম বর্ণিত হয়। জুলুমের সমপরিমাণ প্রতিশোধ নেওয়া বা ক্ষমা করার বিধান ও ফজিলত বর্ণিত হয়।