০২। সূরা বাকারাহ, আয়াত ২০২ থেকে ২৮৬
হাজ্জের বিধিবিধান বর্ণনা শেষে মুনাফিক ও সাচ্চা ঈমানদারের পার্থক্য বর্ণনা করে ইসলামে পূর্ণরূপে প্রবেশ করার হুকুম করা হয়েছে। কাফিররা বলত স্বয়ং আল্লাহ নিজেকে দেখা দিয়ে হুকুম করলে তারা মানবে। অথচ আল্লাহর নিদর্শনসমূহ দেখেও ঈমান না আনা এইসকল লোকেরা যে হঠকারি মানসিকতার কারণেই এই অজুহাত দেয়, তা উন্মোচন করা হয়েছে।
কাফিররা নিজেদের ধনসম্পদের প্রাচুর্যের দিকে ইঙ্গিত করে বলত আল্লাহ তাদের প্রতি খুশিই আছেন। আখিরাতে তাদের অবস্থা কেমন হবে আর ঈমানদারদের মর্যাদা কত বেশি হবে, তা স্মরণ করিয়ে আল্লাহ তাদের ভুল ধারণা খণ্ডন করেন।
আদম (আঃ) থেকে শুরু করে মানবজাতি একই উম্মত ছিল, পরে তারা বিভিন্ন মনগড়া ধর্মমতে ভাগ হয়ে পড়ে। আল্লাহ যুগে যুগে কিতাব আকারে তাঁর হিদায়াত পাঠান। যারা নিজেরাই এই কিতাব বিকৃত করে ফেলেছে, তাদের দুর্ভোগের কথা বলা হয়। ঈমানদারদেরকে আল্লাহ এসব থেকে বাঁচিয়ে সঠিক পথের দিশা দেন।
পূর্ববর্তী নবী ও উম্মতগণ কত কষ্টের মাঝে দিয়ে অতিক্রম করেছেন, তা জানিয়ে সান্ত্বনা দেওয়া হয়। অতঃপর যুদ্ধ ফরজ করার হেকমত বর্ণিত হয়।
কুরাইশদের কাফেলা আক্রমণের ঘটনায় সাহাবিদের হাতে একজন মারা যায়, কিন্তু তা ঘটে পবিত্র মাসসমূহের শেষ দিনে, যেসব মাসে যুদ্ধ নিষিদ্ধ ছিলো। কাফিররা এটা নিয়ে তোলপাড় করে ফেলে যে মুসলিমরা নিজেরাই পবিত্র মাসসমূহের সম্মান করে না। আল্লাহ এ ব্যাপারে আয়াত নাযিল করে কাফিরদের আরো বড় বড় সব গুনাহের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে দেখান যে এই একটা বিষয়ে তাদের এত মায়াকান্না শোভা পায় না। এর বিপরীরতে ঈমানাদার মুহাজির মুজাহিদদের আল্লাহর রহমতের সুসংবাদ দেওয়া হয়।
মদ-জুয়া নিষিদ্ধ করার প্রাথমিক স্তরের আয়াত নাযিল হয়, যেখানে বলা হয় এসব জিনিসে সামান্য উপকার থাকলেও ক্ষতি অনেক বেশি।
ইয়াতীমদের লালনপালনের ব্যাপারে মধ্যমপন্থার সবক দেওয়া হয়। খুব কড়াকড়ি করতে গিয়ে নিজ পরিবারকে অভুক্ত রাখাও যাবে না, আবার ইয়াতীমদের একেবারে অবহেলাও করা যাবে না।
মুশরিকদের সাথে বিবাহসম্পর্ক স্থাপন নিষেধ করা হয়। ঈমানদার দাসদাসীও মুশরিক সম্ভ্রান্তদের চেয়ে উত্তম।
ঋতুস্রাব চলাকালীন সহবাস না করা, যেসব পথে সহবাস জায়েয সেসব রাস্তায় পছন্দমতো সহবাস করার হুকুম বর্ণিত হয়।
আরবদের মাঝে কথায় কথায় কসম করার প্রবণতা আছে। অনর্থক কসমের ব্যাপারে বিধান বর্ণিত হয়েছে। তারপর তালাক, ইদ্দত, মোহর, শিশুকে দুগ্ধদান, বিধবা বিবাহ, বিবাহের ইচ্ছাপোষণ করা, বিবাহের প্রস্তাব পাঠানো, বিধবা ও তালাকপ্রাপ্তাদের খোরপোষের ব্যাপারে ন্যায়সঙ্গত পন্থা কী হবে তা বর্ণনা করা হয়েছে। সালাতের গুরুত্বের কথা দিয়ে এ বিধবিধান বর্ণনা শুরু হয়েছিল, শেষে এসে এর কথা আবার বলা হয়, বিশেষ করে আসরের সালাত। যুদ্ধাবস্থায়ও সালাতের গুরুত্ব ও বিধান বলা হয়।
আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে জীবন ও সম্পদ কোরবানি করার উৎসাহ দিয়ে কয়েকটি ঘটনা বর্ণনা করা হয়, যেখানে দেখানো হয় হায়াত-মাওত আল্লাহর হাতে। আর সবসময় উম্মাহর মাঝে এমন লোক ছিলো, যারা বিভিন্ন অজুহাতে জিহাদ থেকে দূরে থাকে।
প্রাচীনকালের কোনো এক সম্প্রদায় জীবন বাঁচানোর লক্ষ্যে ভিটেমাটি ছেড়ে চলে যায়। আল্লাহ তাদের মৃত্যু দিয়ে আবার জীবিত করে দেখিয়ে দেন মৃত্যু তাকদিরে থাকলে তা আসবেই। নবী উযাইর (আঃ)-কে আল্লাহ একবার মৃত্যু দিয়ে একশ বছর পর পুনর্জীবিত করেন। নবীদের ঈমানকে মজবুত করতে আল্লাহ এরকম চাক্ষুষ নিদর্শন দেখাতেন তাঁদের। এছাড়া ইবরাহীম (আঃ)-কে চারটি পাখি জবাই করে কেটে তাদের গোশত মিশিয়ে চারটি পাহাড়ের চূড়ায় রেখে ডাক দিতে বলা হয়। এতে পাখিগুলো অবিকৃত অবস্থায় জীবিত হয়ে তাঁর দিকে ছুটে আসে। এছাড়া নমরুদ একজন কয়েদীকে হত্যা করে, আরেকজনকে ছেড়ে দিয়ে বোকার মতো নিজেদে জীবন-মৃত্যুর মালিক দাবি করে। ইবরাহীম (আঃ) তাকে সূর্য পশ্চিম দিকে থেকে উদিত করে দেখাতে বললে তার অপারগতা প্রকাশ পেয়ে যায়। এছাড়া বনী ইসরাইলের একটি ঘটনা বর্ণিত হয়। সামুয়েল (আঃ) এর নবুওয়ত কালে বনী ইসরাইল তাঁর কাছে গিয়ে নিজেদের জন্য একজন বাদশাহ নিযুক্ত করে দিতে বলে যাতে তাঁর অধীনে জিহাদ করতে পারে। সামুয়েল (আঃ) বলেন তারা যে চরম মুহূর্তে গিয়ে পিঠটান দেবে না, তারা নিশ্চয়তা কী। বনী ইসরাইল আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলতে থাকে ভিটেমাটি থেকে উতখাত হয়েও কেন তারা জান লাগিয়ে জিহাদ করবে না! তারপর আল্লাহর নির্দেশে তালূত (আঃ) বাদশাহ নিযুক্ত হন। তিনি বনী ইসরাইলের যোদ্ধাদের কিছু কঠিন পরীক্ষার মাঝ দিয়ে নেন। বেশিরভাগই এতে ঝরে পড়ে। বাকিরা আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে যে, আল্লাহর সাহায্যে কত ছোট দলই তো কত বড় দলকে হারিয়েছে। তালূত (আঃ) এর বাহিনী জালূতের বিশাল সেনাবাহিনীর মোকাবেলা করে। তালূত (আঃ) এর বাহিনীতে দাউদ (আঃ) ছিলেন, যিনি তখনও নবী হননি। তিনি মহাশক্তিধর জালূতকে হত্যা করে বনী ইসরাইলের বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। কোনো কোনো নবী (আঃ)-কে আল্লাহ অন্য নবীদের চাইতেও উঁচু মর্যাদা দিয়েছেন। উল্লেখ্য, মুমিনরা সমস্ত নবী (আঃ)-এর ওপরই সমানভাবে ঈমান আনে। তবে শরী‘আত কেবল মুহাম্মাদ (সাঃ) এর প্রতিষ্ঠিত দ্বীন অনুযায়ীই হবে। এসব ঘটনা এবং বিধানের ফাঁকেই আল্লাহর মহাক্ষমতার বর্ণনা সম্বলিত আয়াতুল কুরসি রয়েছে। এবার যার ইচ্ছা হয় আল্লাহর ওপর ভরসা করে তাঁর রাস্তায় কাজ করবে, কোনো জবরদস্তি নেই। আল্লাহ মুমিনদের অভিভাবক আর তাগুত কাফিরদের অভিভাবক।
আল্লাহর পথে দানসদকা করলে সাতশ গুণ বা তারও বেশি সাওয়াব হয়। দান করে খোঁটা দেওয়ার স্বভাবকে তিরস্কার করা হয়েছে। উত্তম কথা বলার আদেশ করা হয়েছে। বিভিন্ন উপমা দিয়ে দেখানো হয়েছে এসব খোঁটার কারণে কীভাবে দানের সাওয়াব নষ্ট হয়ে যায়। লোক দেখানোর নিয়ত না থাকলে প্রকাশ্যেও দান করা যায়, তবে গোপনে করা আরো উত্তম। গরীবদের পাশাপাশি সেসব মিসকীনকেও খুঁজে খুঁজে দান করতে বলা হয় যারা আত্মসম্মানের জন্য হাত পাততে পারে না।
সুদের লেনদেন নিষিদ্ধ করে ব্যবসা ও দানসদকাকে প্রশংসা করা হয়েছে। পূর্বে যা হয়ে গেছে, তা মাফ। এখন থেকে আর কেউ সুদ লেনদেন করবে না। পাওনা টাকার সুদ মাফ করে শুধু আসল ফেরত নেবে। যারা অন্যথা করবে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সাঃ) বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা শুনে নিক। অস্বচ্ছল দেনাদারদের অবকাশ দেওয়া বা ক্ষমা করার আদেশ করা হয়।
লেনদেনের ক্ষেত্রে সাক্ষীসহ লিখিত ডকুমেন্ট রাখার গুরুত্ব ও নিয়ম নিয়ে বলা হয়। লেখার সুযোগ না থাকলে জিনিস বন্ধক রাখার নিয়মাদি বর্ণনা করা হয়।
আল্লাহ মানুষের অন্তরের গোপন বিষয়ের ব্যাপারেও হিসাব নেবেন। আল্লাহ কারো ওপর সাধ্যাতীত বোঝা চাপান না। ঈমানদারদের দায়িত্ব হলো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশসমূহের প্রতি "শুনলাম ও মানলাম" মানসিকতা রাখা। আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, কিতাবসমূহ ও রাসূলগণের ওপর ঈমান আনতে হবে। আল্লাহ যেন আমাদের ওপর সাধ্যাতীত দায়িত্ব না দেন, আমাদের ভুলত্রুটি মাফ করেন ও কাফিরদের বিরুদ্ধে সাহায্য করেন, সেই দু’আ শেখানোর মাধ্যমে শেষ হয় কুরআনের দীর্ঘতম এই সূরা।
০৩। সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১ থেকে ৯১
সূরা আলে ইমরানের শুরুতে বলা হয়েছে আল্লাহ ফুরকান নাযিল করেছেন, যার অর্থ সত্যমিথ্যার প্রভেদকারী। হতে পারে এটি কুরআন, অথবা আল্লাহর নাযিলকৃত অন্য কোনো জ্ঞান। কুরআনের কিছু আয়াত স্পষ্ট আদেশনির্দেশাদি সম্বলিত বা মুহকামাত। এগুলোই কিতাবের মূল অংশ যা আমাদের পালন করতে হবে। আর কিছু আয়াত আমাদের পূর্ণ জ্ঞানে আয়ত্ত করা সম্ভব না, এদের বলে মুতাশাবিহাত। যেমন আলিফ-লাম-মীম এর অর্থ, আল্লাহর আরশে আরোহণের স্বরূপ ইত্যাদি। যাদের মনে বক্রতা আছে তারা এগুলো নিয়ে অপ্রয়োজনীয় দার্শনিক আলাপে লিপ্ত হয়ে পথভ্রষ্ট হয়। আমাদের দায়িত্ব কেবল এগুলোর প্রতি ঈমান আনা।
কুফর অবলম্বনকারীরা শক্তিশালী হলেও ফিরআউনের মতো পরাজিত হবে। বদরের প্রান্তরে কাফিররা এভাবেই শক্তিশালী হওয়ার পরও পরাজিত হয়। ঈমানদাররা দুনিয়ার মোহাবিষ্টকারী জিনিসের চেয়ে আখিরাতের স্থায়ী সম্পদকে বেশি ভালোবাসে। তারা ধৈর্যশীল, ইবাদতগুজার, আল্লাহর রাস্তায় ব্যয়কারী ও ফজরের ওয়াক্তের আগ মুহূর্তে সাহরির সময়ে ইস্তিগফারকারী।
বনী ইসরাইলীরা ভাবে তারা জাহান্নামে গেলেও অল্প সময়ের জন্য যাবে, কারণ তারা আল্লাহর প্রিয়পাত্র। আল্লাহ তাদের কিতাব বিকৃত করা ও নবীদেরকে হত্যা করার কথা স্মরণ করিয়ে আযাবের 'সুসংবাদ' দেন। মুসলিমরা রোম ও পারস্য বিজয় করবে এমন কথা শুনে তারা হাসত। অথচ আল্লাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা দেন, যাকে ইচ্ছা লাঞ্চিত করেন।
মুমিনগণ যেন মুমিনদের নিজেদের ছেড়ে কাফিরদেরকে বন্ধু না বানায়। অবশ্য দুর্বল অবস্থায় আত্মরক্ষার প্রয়োজন হলে ভিন্ন কথা।
আল্লাহকে ভালোবাসলে রাসূলের অনুসরণ করতে হবে।
ইমরানের স্ত্রী তাঁর গর্ভের সন্তানকে আল্লাহর রাস্তায় ওয়াকফ করার নিয়ত করেন। কিন্তু কন্যাসন্তান হওয়ায় একটু হতাশ হন। এই কন্যা ছিলেন মারইয়াম (আঃ)। তাঁর দ্বারা দ্বীনের যে খেদমত হয়, তা কোনো ছেলের দ্বারা হওয়া সম্ভব ছিল না। তিনি বায়তুল আকসার খাদিমা থাকাকালে আসমান থেকে তাঁর কাছে রিযিক আসত। কুমারী অবস্থায় তাঁর গর্ভে ঈসা (আঃ) আসেন, যিনি আল্লাহর ইচ্ছায় শিশুবয়সে কথা বলার মাধ্যমে তাঁর মা-কে ব্যভিচারের অপবাদ থেকে রক্ষা করেন।
ইমরানের মৃত্যুর পর লটারি করে মারইয়ামের অভিভাবক ঠিক করা হয় যাকারিয়া (আঃ)-কে। তিনি মারইয়াম (আঃ) এর কাছে আসমানী রিযিক আসতে দেখে বৃদ্ধ বয়সেও সন্তানলাভের জন্য আশান্বিত হন। আল্লাহর কাছে দু’আ করলে তাঁকে ইয়াহইয়া (আঃ) নামক সন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয়। নবুওয়াতি জীবনে ইয়াহইয়া (আঃ) ছিলেন ঈসা (আঃ) এর সহায়তাকারী।
ঈসা (আঃ) আল্লাহর হুকুমে মাটির পাখিতে প্রাণ ফুঁকে দেওয়া, মৃতকে জীবিত করা, জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগীকে আরোগ্য করার মু’জিযা দেখাতেন। তিনি তাওরাতকে সত্য বলে সাক্ষ্য দেন। তবে মূসার (আঃ) শরিয়তের কিছু হারাম বস্তু ঈসার (আঃ) শরিয়তে হালাল হয়। হাওয়ারীগণ (ঈসা আঃ এর সাহাবা) আল্লাহর রাস্তায় সাহায্যকারী হওয়ার ওয়াদা করেন। কাফিররা চক্রান্ত করলে আল্লাহ তাঁকে তুলে নেন। ঈসা (আঃ) এর ওপর ঈমান আনয়নকারীদেরকে কুফরিকারীদের ওপর প্রবল করার প্রতিশ্রুতি দেন। ইতিহাসেও দেখা যায় বেশিরভাগ সময়ে মুসলিম ও খ্রিষ্টানরা অন্যান্য জাতির ওপর প্রবল ছিল। ঈসা (আঃ) আল্লাহর অলৌকিক সৃষ্টি, যেমন আদম (আঃ) ছিলেন পিতামাতাবিহীন সৃষ্টি। আল্লাহর কাছ থেকে এ সত্য আসার পরও যারা বিতণ্ডা করে, তাদের সাথে প্রয়োজনে মুবাহালা করতে বলা হয়। মুবাহালা হলো বিতণ্ডায় কোনো পক্ষ সুস্পষ্ট প্রমাণ দেখার পরও হঠকারিতা করলে উভয়পক্ষ সপরিবারে উপস্থিত হয়ে বাতিল পক্ষের ওপর আল্লাহর আযাব কামনা করা।
ইবরাহীম (আঃ)-কে ইয়াহুদীরা ইয়াহুদী মনে করে, খ্রিষ্টানরা খ্রিষ্টান মনে করে। অথচ এ দুটো নাম এসেছে তাওরাত ও ইঞ্জিল নাযিলের পর, আর ইবরাহীম (আঃ) ছিলেন এর আগের। ইবরাহীমের সবচেয়ে নৈকট্যের দাবিদার মুহাম্মাদ (সাঃ) এর ওপর ঈমান আনা মুসলিমরা। আহলে কিতাবরা তা জেনেও গোপন করছে।
আহলে কিতাবদের কেউ কেউ ষড়যন্ত্র করে যে একদিন তারা ঈমান আনার ভান করে পরে অস্বীকার করে বলবে “আমরা মুহাম্মাদকে (সাঃ) কাছ থেকে দেখেছি। এই লোক কিতাবে বর্ণিত সেই নবী নয়।” এতে লোকজনকে বিভ্রান্ত করা সহজ হবে। আল্লাহ তাদের পরিকল্পনা ফাঁস করে দেন। তাদের অনেকে ভালো আমানতদার, আবার অনেকে খিয়ানতকারী। কারণ তারা ভাবে আহলে কিতাবদের বাইরে কারো আমানতের খিয়ানত করা পাপ নয়। তাদের অনেকে কিতাব তিলাওয়াতের সময় জিহ্বা বক্র করে এর কথা পরিবর্তন করে ফেলত। এভাবেই ইয়াহুদীরা উযাইর (আঃ)-কে এবং খ্রিষ্টানরা ঈসা (আঃ) কে আল্লাহর পুত্র বানিয়ে ছাড়ে। অথচ জ্ঞানবান মাত্রই বুঝতে পারে তাওহীদের দাওয়াত প্রদান করা এই নবীগণ নিজেদেরকে আল্লাহর স্থানে বসাতে পারেন না। আল্লাহ সমস্ত নবীর কাছ থেকে এই ব্যাপারে ওয়াদা নিয়েছেন যে, তাঁদের কারো জীবদ্দশায় অন্য কোনো নবী এলে তিনি নতুন নবীর সত্যায়নকারী এবং সাহায্যকারী হবেন।
ইসলাম ছাড়া অন্য দ্বীনের অনুসারীরা আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত। ঈমান আনার পর কেউ কুফরী করলে তার ওপর আল্লাহ, ফেরেশতাগণ এবং সমস্ত মানুষের লানত। সে জাহান্নামে চিরস্থায়ী হবে।