সে অনেক দিন আগের কথা। একবার দুইজন ভাইকে দেখছিলাম ইসলামের কোনো একটা বিষয় নিয়ে কথা বলছেন। অতি সাধারণ একটা বিষয় নিয়ে তারা এত সিরিয়াস আলোচনা করছিলেন যে আমার প্রচণ্ড ঈর্ষা হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল এরা কতকিছু জানে, কত আমল করে, আমি কিছুই জানি না। আমার আমল কত কম!
বেশ কয়েক বছর পর সেদিনের এক ভাইকে ফেসবুকে দেখলাম। বুদ্ধিজীবী মার্কা কথাবার্তা বলেন ইদানীং। প্রফাইলে বউয়ের ছবি দিয়েছেন, চোখ নামিয়ে রাখতে হয় এমন, পর্দা কিংবা প্র্যাক্টিসিং তো দূরের কথা, দেখে বোঝার উপায় নেই মুসলিম না অমুসলিম!
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে দুআটা বেশি বেশি করতেন, "ইয়া মুক্বাল্লিবাল ক্বুলুব, ছাব্বিত ক্বালবি 'আলা দ্বীনিক"- হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী, আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের উপর অটল রাখো।" আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে রাসূলের এই দুআ কেন করতে হচ্ছে, তিনি তো হিদায়াতের উপরই আছেন!
আমাদের হায়াতের পুরো সময়টা আসলে ফিতনার। একটার পর একটা ফিতনা আসতেই থাকবে। এখানে হিদায়াতের উপর টিকে থাকতে পারাটাই আসল। আর জীবিত মানুষের হিদায়াতের কোনো গ্যারান্টি নেই। যেকোনো সময় মানুষের চিন্তাভাবনা, আদর্শ, পরিবর্তন হতে পারে। আল্লাহ যেকোনো সময় কারো হিদায়াত ছিনিয়ে নিতে পারেন। আল্লাহ আমাদেরকে এত বড় শাস্তি থেকে হেফাজত করুন। আমীন।
এই বিষয়ে তারিক মেহান্নার কিছু চমৎকার কথা আছে, কথাগুলো আমাদের মনে শক্ত করে গেঁথে রাখা উচিত। তারিক মেহান্না বলেন,
"আমরা অনেক সময় কোনো ব্যাক্তির বিপ্লবী কথাবার্তা শুনে তাকে “ভালো দ্বীনি ভাই” ভাবা শুরু করি, তখন এমনটা হতে পারে যে আমরা তার বিদ্রোহী চেতনাকে দ্বীনের প্রতি আন্তরিক উৎসাহ ও নিষ্ঠা বলে ভুল করছি। প্রকৃতপক্ষে এমনটা হতে পারে যে ঐ ব্যক্তির জন্য ইসলাম হলো শুধুমাত্র “এই মাসের স্পেশাল অফার”।
এরকম হওয়ার সবচেয়ে বড় লক্ষণ হলো–তার কথাবার্তা ও দ্বীনি পড়াশোনার মাঝে অন্তর কোমলকারী বিষয়সমূহের নগণ্য উপস্থিত। কখনোই নফল ইবাদাত না করা এবং ইসলামকে একটি পূর্ণাঙ্গ আদর্শ, একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা হিসেবে অনুধাবন করার চেষ্টা না করাও এর অন্তর্ভূক্ত।
এই ধরনের মানুষগুলোকে শুধুমাত্র বিতর্কিত এবং আমোদজনক বিষয়গুলো নিয়ে তর্কে মেতে থাকতে দেখা যায়। কারণ শুধুমাত্র স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে নিজেকে বাকি সবার চাইতে আলাদা প্রমাণ করার আকাঙ্ক্ষা থেকেই এই মানুষগুলো ইসলামে প্রবেশ করে, আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার কাছে নিজেকে সমর্পণ করে দিতে নয়।
তারা পুরোন কথা শুনতে আগ্রহ পায় না, সবসময় নতুন কিছুর জন্য অস্থির হয়ে থাকে। শতকরা ৯৯ ভাগ ক্ষেত্রে এটাই তাদের ইসলামের ব্যাপারে অনাগ্রহী হয়ে উঠার কারণ। এই ধরনের লক্ষণগুলো অন্য যাদের মধ্যে দেখা যায় তাদেরকে নিয়েও আমার ভয় হয়। খুব বেশী দেরী হয়ে যাবার আগেই নিজে রক্ষা করুন। দ্বীনের মাঝে বিতর্ক আর বিনোদন খোঁজা বন্ধ করুন। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার সম্পর্কে জানতে, তাঁর সম্পর্কে সচেতন হতে চেষ্টা করুন । চেষ্টা করুন আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার সাথে নিজের সম্পর্ক গড়ে তুলতে।
কারো কারো কাছে হয়তো এটা একঘেয়ে, বিরক্তিকর মনে হতে পারে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটাই আপনাকে রক্ষা করবে। সবসময় বিতর্কিত বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন না, এবং তার বদলে প্রতিদিন চোখ বোলানোর জন্য নিচের বইগুলোকে আপনার টেবিলে স্থান দিন:
- আল কুরআন
- রিয়াদুস সালেহীন, ইমাম নববী
- আল আদাবুল মুফরাদ, আল বুখারী
- আয যুহদ, ইমাম আহমাদ
এই বইগুলো শুধুশুধু লেখা হয়নি। এই সিলেবাসটি নিয়মিত ধরে রাখার চেষ্টা করুন। এগুলো নিয়মিত পড়লে আপনার হৃদয়ের চারপাশে একটি দুর্গ গড়ে উঠবে। যখন ফিতনার আঘাত আসবে তখন এই দুর্গই আপনাকে রক্ষা করবে। এবং নিশ্চিত থাকুন আজ হোক, কাল হোক, ফিতনার এই আঘাত এক সময় আসবেই"