প্র্যাক্টিসিং ভাই-বোনদের অনেকে আশেপাশের ছেলেমেয়েগুলোর জাহিলিয়াত চর্চা আর লাইফের এনজয়মেন্ট দেখে হতাশ হন। পরকালের প্রতিদানের কথা ভেবে সবর করেন। যারা ইসলামকে দ্বীন হিসেবে (জীবনব্যবস্থা, কেবল ধর্ম নয়) বেছে নেয় নি তাদের জীবন এত আনন্দময় হতে দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।
আসলেই কি তাই? ইসলাম থেকে দূরে থাকা মানুষগুলো কি আসলেই এত সুখী? মু'মিনদের সুখ-আনন্দ কি কেবল পরকালের জন্যই বরাদ্দ?
নারে ভাই, নারে বোন। ওরা ওদের কষ্টগুলোকে মেকি উৎফুল্লতা দিয়ে ঢেকে রাখতে চায় বলে, নয়তো ওই কুৎসিত আর্তনাদের প্রতিমূর্তি একবার উন্মোচিত হলে বুঝতে পারতেন ওরা কত দুঃখী। ওদের বড় বড় দুঃখের খাদগুলো ভরাতে কত আয়োজন করে, শেষে ব্যর্থ হয়। এ ব্যর্থতা অনিবার্য। কেননা সুখের যিনি মালিক, তাঁর থেকে ওরা পলায়ন করছে।
যেমন সম্পর্ক। হারাম সম্পর্কের পথে পা বাড়িয়ে "কাছের মানুষের" থেকে কীভাবে প্রতারিত হতে হয়, ওদের জিজ্ঞেস করুন। জিজ্ঞেস করুন ঐ মেয়েটিকে, যে অবৈধ সন্তান গর্ভে নিয়ে চিকিৎসকের দুয়ারে ঘুরে ফিরছে, আর বিলাপ করছে পালিয়ে যাওয়া সঙ্গীটির জন্য। জিজ্ঞেস করুন ঐ ছেলেটিকে, যে আবিষ্কার করে দীর্ঘদিনের বান্ধবীর এক্স বন্ধুর সাথে ঘনিষ্ঠ ছবি। জিজ্ঞেস করুন ঐ মা কে, যার একমাত্র ছেলে "প্রেমের মর্যাদা" দিতে জলে ঝাপ দিয়ে নিজেকে না ফেরার দেশে নিয়ে গেছে। জিজ্ঞেস করুন ওই বাবাকে, যার রক্ত পানি করা শ্রম দিয়ে গড়ে তোলা কিশোরী মেয়েটি পালিয়ে গেছে স্বল্পদিনের পরিচিত কোন ছেলের হাত ধরে।
বিশ্বাস করুন, আপনি ঐ আশেপাশের স্রোতের জোয়ারে গা ভাসানো ছেলেমেয়েগুলোর কাছে জানতে চাইলে এই চিত্রগুলোই উঠে আসবে। আল্লাহ্র কসম, তারা সুখী নয়, তারা সুখী হতে পারে না। জীবনের উদ্দেশ্যকে হাতড়ে বেড়ানো মানুষগুলোকে দুপয়সার সুখের লোভে লালায়িত হয়ে নিজেকে ভাসিয়ে দেয়, তবু সুখ ধরা দেয় না। তাই সকল বস্তুবাদী আয়োজন সুলভ থাকার পরও কেউ আত্মহত্যা করে, কেউ স্ত্রী-সন্তান সব থাকার পরও বিছানায় ঘুমাতে পারে না। নিজেদের সুখী দেখাতে কত প্রতারণা, কত নাটক!! সবের শেষে গিয়ে তারা আশ্রয় খোঁজে ওই গানটাতে—"নিজ ভুবনে চির দুঃখী, আসলে কেউ সুখী নয়……"
আমার এক স্কুলফ্রেন্ডের আপুর (নন-প্র্যাকটিসিং) লেখা একটি নোট পড়লাম। সমাজে মেয়েদের কীভাবে সেক্স অবজেক্ট হিসেবে ট্রিট করা হয় তা নিয়ে। অনেক বয়ফ্রেন্ড তার গার্লফ্রেন্ডকে কেবল সেক্স ম্যাটেরিয়াল হিসেবেই দেখে। মেয়েগুলো যখন সেটা বুঝতে পারে তখন তারা মনঃকষ্টে ভোগে। সেক্সুয়াল অবজেক্টিফিকেশন দাম্পত্য জীবনে সম্পর্কে ভাঙ্গন ধরায়। লেখাটিতে আপু যেসব কেসের কথা বলেছেন তার প্রায় সবই প্রেম করে বিয়ে করা দম্পতীদের। এ জাতীয় লেখার নিচে অনেক মেয়ে এসে কমেন্ট করে। তাদের বয়ফ্রেন্ড তাদের সাথে কীভাবে প্রতারণা করেছে, ছেলেরা কত খারাপ, নারীদের জেগে উঠতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি……
আপু তার বিপুল জ্ঞান-গরিমা দিয়ে নানাপ্রকার সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এসব দেখে আমি মনে মনে একটু সহানুভূতি প্রকাশ করি। এত সহজ একটা সমাধান-ইসলাম, তাকে বেছে নিতে না পেরে এই মানুষগুলো তাদের মগজভর্তি বিদ্যাবুদ্ধি খরচ করে নানা বায়বীয় সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করে, কাজ হয়না কোনটাতেই।
আমরা যারা কেবল আল্লাহ্র কাছে আত্মসমর্পণ করতে চাই, তাদের এত জ্ঞান-গরিমা প্রয়োগ করে সমাধান করা লাগে না। আমরা কেবল এক আল্লাহ্র হুকুমের কাছে মাথা নত করে সমাধান করতে পারি। হারাম সম্পর্কের মোহ ত্যাগ আর মাহরাম সংক্রান্ত বিধান মানলেই যে সব সমস্যা চলে যায়, এটা তারা দিনরাত ভেবে বের করতে না পারলেও আমরা পারি। আলহামদুলিল্লাহ্।
আর তাই দ্বীনের পথের মানুষগুলোর জীবন অত কমপ্লেক্স না। তারা তাদের দুঃখ-কষ্ট কেবল আল্লাহ্র সমীপেই অর্পণ করে। নন-প্র্যাকটিসিং মানুষগুলোর নানা যন্ত্রণার এসব আলোচনা ঘেঁষে চলতে গিয়ে বারবার আল্লাহ্র নিকট কৃতজ্ঞতায় মাথা অবনত হয়ে আসে, যিনি তাঁর নগণ্য বান্দাকে এই সুখের হরিণ খুঁজে ছোটা থেকে রক্ষা করেছেন। ওদের মত বিপর্যস্ত জীবন থেকে বাঁচিয়েছেন। সুবহানআল্লাহ্।
অন্তরের প্রশান্তির স্বাদ তারাই পায় যারা এক আল্লাহকে ইলাহ মেনে নিতে পেরেছে। লক্ষ প্রভু আর প্রবৃত্তির দাসত্ব থেকে আল্লাহ্ যাদের মুক্তি দিয়েছেন, তারাই স্বাধীন, তারাই সুখী। উভয় জীবনে।
সকল প্রশংসা সেই মালিকের যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক।