মুসলিমদের উপর আপতিত অত্যাচার, নির্যাতনের সময় একটি রেডিম্যাট সমাধান থাকে তাদের জন্য দুআ করা। সেই সাহাবিদের সময় থেকে পরবর্তী প্রজন্ম পর্যন্ত দুআকে একটি শক্তিশালী অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এবং মুমিনের এই দুআর বদৌলতে কত বড় বড় জালিম ধরাশায়ী হয়েছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। নবিজি (সাঃ) বদরের প্রান্তরে আবেগতাড়িত হয়ে যে দুআ করেছিলেন, আসমান থেকে ফেরশতারা নেমে এসেছিল। এমনকি খোদ জালিমরাও মুমিনের দুআকে ভয় করত। খলিফা মু'তাসিমের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বাগদাদবাসীর পক্ষ থেকে একজন প্রতিনিধি যখন গিয়ে বলল, তোমার অত্যাচার বন্ধ করো নইলে আমরা তোমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। খলিফা মু'তাসিম নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের মুখে যুদ্ধের কথা শুনে হেসে বলেছিল, তোমরা করবে আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ, অথচ আমার কাছে আশি হাজার সশস্ত্র সৈন্য আছে। তখন প্রতিনিধি বলল, আমরা আপনার বিরুদ্ধে 'রাত্রি বেলার তীর' (তাহাজ্জুদ সালাতে আল্লাহর কাছে করা দুআ) দিয়ে যুদ্ধ করব। এই শুনে খলিফা মু'তাসিম বলেছিল, আমি এই ভয়ঙ্কর তীরের মুখোমুখি হতে পারব না।
এখন তো আমরা সব জানি, কোন দুআ পড়লে কি হবে, কোন সময় কি দুআ পড়বে হবে তা এখন মোবাইল এপের মাধ্যমে সবার হাতে হাতে। একটা আঙুলের টিপ দিলেই যখন যে দুআ চাই সেটা চোখের সামনে চলে আসে। প্রতি বছর হজে গিয়ে মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ আল্লাহর কাছে কাঁদে। ফিলিস্তিনের জন্য কাঁদে, সিরিয়ার জন্য কাঁদে, মুসলিম উম্মাহর জন্য দুআ করে। আল্লাহ কি আমাদের দুআ শোনেন না? তিনি দেখেন না, এতগুলো মানুষ চোখের পানি ফেলছে? হ্যাঁ, তিনি শোনেন, দেখেন! তাহলে এই দুআ কোথায় যায়? এর কোনো প্রভাব নেই কেন?
এই দুআ বিফলে যাওয়ার প্রধান কারণ আমাদের মধ্য থেকে সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ করার আমল হারিয়ে যাওয়া। অন্যায়, অবিচার, ফাহিশা কাজে চোখ সয়ে যাওয়া। হাদিসটা এসেছে জামে আত তিরমিযিতে, শাইখ আলবানি এটাকে সহিহ বলেছেন। নবিজি (সাঃ) বলেছেন,
"তোমরা অবশ্যই সৎ কাজের আদেশ করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের প্রতি শাস্তি নাযিল করবেন"
কি সেই শাস্তি? নবিজি (সাঃ) বলেন, "তোমরা আল্লাহর কাছে হাত তুলে দুআ করবে কিন্তু তিনি তা কবুল করবেন না।"
আর রহমান যদি কারো দুআ কবুল না করেন, তার জন্য এর চেয়ে বড় শাস্তি আর কি হতে পারে! সমস্ত মুসলিম উম্মাহ আজ এই শাস্তির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়ে দুআ থাকার পরও আমরা কেন বিপদে পরে যাই, এর সুন্দর একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন শাইখ উমার আল আশকার (রহঃ)। তিনি বলেন, "আল্লাহ্র সাহায্য চাওয়াটা যোদ্ধার হাতের তরবারির মতো। তার বাহু শক্তিশালী হলে এই তরবারি দিয়ে সে শত্রুকে হত্যা করতে পারবে। আর বাহু দুর্বল হলে ধারালো তরবারি দিয়েও শত্রুর গায়ে আঁচড় দেওয়া যায় না।"
তাই আমাদের উচিত নিজেদের পাপের ব্যাপারে ভীত হওয়া, নিজেদের নিষ্ক্রিয়তা, নীরবতা নিয়ে ভীত হওয়া। সেই অবস্থার কথা চিন্তা করে ভীত হওয়া, যখন আমরা আর রহমানের কাছে হাত তুলে দুআ করব, কিন্তু সেই দুআ কবুল করা হবে না। আমাদের উচিত আমাদের ঈমানকে মজবুত করা, যাতে আমাদের দুআ এতটা শক্তিশালী হয় যে তা আরশ মহলে গিয়ে পৌঁছায়। যে দুআর শক্তিতে আসমান থেকে আবাবিল পাখি নেমে আসবে। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফিক দান করুন। আমীন।