[১]
চার বছরের ছোট্ট মাহাদী জন্মদিনে দাবী করলো ওকে সুপারম্যানের পোশাক কিনে দিতে হবে। বাবা যথাসময়ে উপহার কিনে আনলেন। আজ সকালে হলো কি, হঠাৎ বেড রুম থেকে মাহাদীর তীব্র চিৎকার ও কান্না শুনে আম্মু দৌড়ে এসে ঘটনা দেখে থ হয়ে গেলেন। মাহাদী আলমিরার পাশে শুয়ে শুয়ে কাঁদছে গায়ে সুপারম্যানের পোশাক। তাড়াতাড়ি ডক্টরের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো মাহাদীকে। রিপোর্ট হলো পায়ের দুটো আঙ্গুলের হাড় ভেঙ্গে গেছে। মাহাদী আম্মুকে বলছে, “সুপারম্যান ড্রেস পড়ে লাফ দিলে তো পড়ে না। আমি কেন পড়ে গেলাম আম্মু?”
[২]
ওমায়রা ছয় বছরের ছোট্ট সোনা মেয়ে। সারাদিন লক্ষ্মীসোনা হয়ে থাকে, পড়ার সময় পড়ে, খেলার সময় খেলে। কষ্টের কথা হলো এই সোনামণিটার আম্মু না ফেরার দেশে। ও বাবামণি আর ফুপুমণির সাথে থাকে। ফুপুমণি ক-মাস পরেই সিডনি চলে যাবেন ফুপামণির সাথে। বাবা তাই ঠিক করলেন ছোট্ট ওমায়রাকে বড় করবার জন্য ও নিজের একাকীত্ব কাটানোর জন্য ওমায়রার জন্য একটা মা নিয়ে আসবেন। ওমায়রাকে বলতেই ও চিৎকার করে বলে উঠলো, না না কক্ষণো না! এরপর বাবাকে ধাক্কা দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো। বাবা খুব অবাক হলেন লক্ষ্মী ওমায়রার এই আচরণে। পরে আদর করে ওকে জিজ্ঞেস করলেন, কেন এমন করলে আম্মু? তুমি কি চাও না তোমার একটা মা আসুক?
– না, আমি চাই না। স্টেপ মাদাররা খারাপ হয়।
– কে তোমাকে বলেছে যে স্টেপ মাদাররা খারাপ হয়?
– কেউ বলে নি, আমি জানি। সিন্ডারেলার স্টেপ মাদার খারাপ ছিলো, স্নো হোয়াইটের স্টেপ মাদার খারাপ ছিলো, স্লিপিং বিউটির পঁচা স্টেপ মাদার ছিলো, সব স্টেপ মাদাররা খারাপ, সব খারাপ! আমার স্টেপ মাদার আসলেও আমাকে মেরে ফেলতে চাইবে।
[৩]
নাঈম অসম্ভব দুষ্টু, জেদী- একরোখা ধরণের পিচ্চি। পড়াশুনায় একদম মন নেই। সারাক্ষণ কার্টুন নেটওয়ার্ক অথবা ডিজনী চ্যানেলের সামনে বসে থাকে। ওর প্রিয় কার্টুনগুলোর মধ্যে আছে পোকেমন, DragonBallZ, টম অ্যান্ড জেরী, স্কুবি ডু, ডোরেমন ইত্যাদি। কাল ইস্কুলের মিস নাঈমের মায়ের কাছে অভিযোগ করেছেন যে, নাঈম ওর বন্ধুদের সাথে মারামারি করে কাজলের চশমা ভেঙ্গে ফেলেছে ও খামচি দিয়ে রক্ত বের করে ফেলেছে। শাস্তি স্বরূপ মা ওর টিভি দেখা বন্ধ করে দিলেন। সে এতটাই কার্টুনে নেশাগ্রস্ত তারপর ওকে শান্ত করাই মুশকিল হলো, অবশেষে যখন ভাঙচুর করা শুরু করলো মা বাধ্য হয়ে হার মানলেন।
[৪]
নুসাইবা একটা ইংলিশ মিডিয়াম ইস্কুলে স্ট্যান্ডার্ড থ্রিতে পড়ে। ওদের ক্লাসে আজকে একটা খুব পঁচা ঘটনা ঘটে গেছে। নুসাইবা আম্মুকে বলে দিয়েছে আর কোনদিন ইস্কুলে যাবে না। কী হয়েছে জানতে চাইলে। ও বললো ক্লাসের দুষ্টু ছেলে ইকরা টিফিন ব্রেকে সবার সামনে ওকে Lip kiss করে বলেছে এটা হলো True Love’s kiss, নুসাইবা এখন থেকে সবসময় Princess Giselle এর মতো ইকরাকে love করবে।
–“এটা একটা লজ্জার কাজ, তাই না মা?”
মা হতভম্ব হয়ে গেলেন।
শহুরে জীবনে মা-বাবার পেশাগত ব্যস্ততার কারণে এবং বিকল্প বিনোদনের তেমন ব্যবস্থা না থাকায় এ যুগের বাচ্চাদের Baby Sitter বলা যায় কার্টুনকে। উপরের কেস স্টডিগুলো লক্ষ্য করুন, বাচ্চাদের নিয়ে এইসমস্যাগুলো কম-বেশি আমরা সবাই face করি। কার্টুনের ভালো-মন্দ বিতর্ক খুব নতুন কিছু নয়। সারা বিশ্বে এ নিয়ে বহু বিতর্ক প্রচলিত। বাংলাদেশে এখনো সচেতনতার বড় অভাব। তাই লেখার প্রয়োজনবোধ করছি।
কল্পণা ঘোড়ার লাগাম ধরেছি কি?
প্রথমেই বলে রাখা ভালো আমি কার্টুনের ভালো দিকগুলো অস্বীকার করছি না। রূপকথাগুলোরও অনেক advantage আছে। কিন্তু সেগুলো কোনটাই অবিমিশ্র ভালো নয়, বাবা-মায়েদের তার সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। Fantasy আর Fairy Tales ততক্ষণ পর্যন্ত আদরণীয় যতক্ষণ তা শিশুকে নির্মল আনন্দের পাশাপাশি নৈতিকতা শিক্ষা দিচ্ছে, এবং শিশু মনে Over Obsession তৈরি না করছে। কেননা, শিশুরা যখন কার্টুনে প্রদর্শিত জগৎ ও বাস্তবের মাঝে যখন মিল খুঁজে পায় না, তখন ওদের মধ্যে হতাশা ও বিষণ্নতা তৈরি হয়। ১নং কেস স্টাডিটা লক্ষ্য করুন, শিশুটি যে সবে আর্লি চাইল্ডহুড অতিক্রম করছে (১- ৬ বছর) ফ্যান্টাসি এবং বাস্তবতার পার্থক্য করতে পারবে না সবসময়। কার্টুনের অবাস্তব ও আধা-বাস্তব জগৎকে সে বিশ্বাস করবে শুরু করবে এর ফলে ঘটে যেতে পারে এমন বিপদ।
শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে কুপ্রভাব
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির ফলিত উন্নয়ন মনোবিজ্ঞান বিভাগের মনোবিজ্ঞানীরা একটি সার্ভে করেছিলেন ৯৫ জন মেয়ে শিশুকে নিয়ে। তাদের প্রিয় টিভি শো-গুলো একটা তালিকা তৈরি করেছিলেন। যেখানে দেখা যায়, মাত্র সাত বছর ও তার কম বয়েসী অনেক শিশুর পছন্দের তালিকায় কিছু হাই লেভেলের ভায়োলেন্ট কার্টুন শো ছিলো। তারা ওই কার্টুনগুলো নিয়ে গবেষণা করে বলেন, সাধারণ টিভি শো-গুলো থেকেও বাচ্চাদের কার্টুনগুলোতে সহিংসতা অনেক বেশি দেখানো হয়। তারা সহিংস ভিডিও গেম, কার্টুনগুলোকে শিশুর আগ্রাসী চিন্তা, আচরণের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন। প্রফেসর ডগলাস জেন্টাইল এর নেতৃত্বে এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়। ৯০ দশকের মাঝামাঝি যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ম করা হয় -টিভি চ্যানেলগুলো তাদের কার্টুনে কী কী দেখাচ্ছে তার বিস্তারিত বিবরণ দেবে। একটি রেটিং সিস্টেমও চালু করা হয় যাতে কার্টুনে ভায়োলেন্সের মাত্রা নিরুপন করা যায়।
Bowling Green State Universityর মনোবিজ্ঞানীরা জাপানে শিশুদের মধ্যে করা একটি গবেষণার পর বলেছেন যে শিশুরা নিয়মিত কার্টুন দেখে তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি বহুগুনে বেশি। তারা একটি বিশেষ কার্টুনকে বেছে নিয়েছিলেন গবেষণার জন্য, এবং সেটি বাংলাদেশেও প্রচারিত -পোকেমন-। তারা পোকেমনকে একটি ঝুঁকিপূর্ণ সহিংস কার্টুন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। মনোবিজ্ঞানীরা এসব শারীরিক ও মানসিক কুপ্রভাব মুক্ত করার জন্য অভিভাবকদের জোর দেন শিশুর বিনোদনে ভারসাম্য আনতে, শিশুর নিয়মিত শরীর চর্চা ও স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি।
আমি একটাও টম অ্যান্ড জেরি এপিসোড দেখি নি যেখানে ভায়োলেন্স নেই, এই কার্টুনগুলো শিশুকে সহিংস, অস্থিরচিত্ত করে তোলে। ৩নং কেস স্টাডির ঘটনাটা বাংলাদেশের অনেক মায়েরই উৎকন্ঠার কারণ। অতিমাত্রায় কার্টুন দেখার ফলে শিশুর মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যগত সমস্যা হতে পারে– স্থুলতা, চোখে সমস্যা, মাথা ব্যথা, অস্থিরতা, আচরণে ভারসাম্যের অভাব, অমনোযোগ, অতি কল্পণা, বিষণ্নতাসহ নানান সমস্যা। কার্টুনে আসক্ত শিশুদের অসামাজিক ও পড়াশোনায় অমনোযোগী হতে দেখা যায়।
কুসংস্কার ও বিজাতীয় অপসংস্কৃতিঃ মাধ্যম যখন কার্টুন
দেশের কৃষ্টি- ইতিহাস বহন করে Folklore বা Folktaleগুলো। কিন্তু এগুলোতে কি সবসময় শিশুমননের উপযোগী contents থাকে? বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে আমি ঠাকুরমার ঝুলির ব্যাপারে কিছু কথা বলতে চাই। বাংলায় প্রচলিত কুসংস্কার কী কী এটা বের করতে চাইলে ঠাকুরমার ঝুলি নিয়ে গবেষণা করাটা সবচেয়ে সহজ উপায়। অথচ, এই কুসংস্কারগুলো আমরা অবলীলায় শিশুদের সামনে দিনের পর দিন প্রচার করে যাচ্ছি। ঠাকুরমার ঝুলিতে ওইসব সংস্কারগুলোকে ও অলৌকিক বিশ্বাসগুলোকে (বিশেষতঃ সনাতন হিন্দু সমাজের) মোটেই মন্দরূপে দেখায় না। এর গল্পগুলোতে মেয়েদেরও চরম অবমাননা করা হয়। কিন্তু পাশাপাশি ঠাকুরমার ঝুলি গল্পে গল্পে কিছু morality শিক্ষা দেয়। শিশুকে ঠাকু’মার ঝুলি দেখতে দিতেই হয়, তাহলে নিজে আগে দেখে, বেছে দিবেন।
ফ্যাশন আইকন বারবি। বাংলাদেশের তার আগমণের প্রায় দুইযুগ হয়ে গেছে। বারবির কোনো ড্রেসকে আপনার কাছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ মনে হবে না, হয় কি? আলাদীনের ডিজনি প্রিন্সেস জেসমিনকে দেখে আমার পরিচিত এক শিশুর প্রথম বাক্য ছিলো, “ ছিঃ ছিঃ ওর ভালো জামা নেই?” তখন ওর বয়স তিন। এখন সে কিন্তু অভ্যস্ত হয়ে গেছে দেখতে দেখতে।
নিজ সংস্কৃতি কিংবা অন্য সংস্কৃতির ভালো কিছু শিখলে শিখুক, কিন্তু এই বাজে দিকগুলোর অনুপ্রবেশ কি গ্রহণীয়?
কার্টুন যখন শিশুর সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশনের মাধ্যম
বাংলাদেশে এখন ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে ডিজনি- পিক্সার নির্মিত এনিমেটেড মুভিগুলো। আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, ৯০% ডিজনি কার্টুন মুভিগুলো স্রেফ প্রেম-ভালোবাসার গল্প। সুন্দর এনিমেশন, গান, দারুণ সংলাপের কারণে শিশুদের তো অবশ্যই বড়দেরও মন জয় করে নেয়। গ্রিম ভাইদের সেই বিখ্যাত রাপুনজেলের কাহিনী নিয়ে তৈরি Tangled কার্টুন মুভিটা দেখছিলাম একদিন স্টার মুভিজে। আমার ক্লাস থ্রি পড়ুয়া ছোট বোন ওটা আগে দেখলেও আমি ওদিনই প্রথম দেখছিলাম। হঠাৎ করে মাঝখান দিয়ে সে চ্যানেল পালটে দিয়ে বলে যে আর দেখা লাগবে না। অন্য কিছু দেখি। আমি বললাম, “কেন? এমন কি আছে ওখানে আমি দেখবো-ই।” সে কোনভাবেই দেখাবে না। আমি বুঝলাম এমন কোন দৃশ্য আছে যা সে ওর বড় বোনকে দেখাতে চায় না। আমি Tangled পুরোটা দেখেছি পরে। প্রেম…. আর সেই চিরকালীন Lost and Found থিমে বানানো একটা মুভি, অথচ কী বিশাল বানিজ্য করলো! মিউজিক ও এনিমেশন অসাধারণ স্বীকার করতেই হয়।
বড়দের নাটকে- মুভিতে না হয় নির্মাতারা নাকি প্রেম ছাড়া আর কোন বিষয়বস্ত খুঁজে পায় না, ছোটদের মুভিগুলোরও এ অবস্থা কেন? অনেক কার্টুন মুভিতে নায়িকাদের শিশু নয় বরং প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে দেখায়, যেখানে তার Lover হিসেবে একজন প্রিন্স চার্মিং (or whoever) থাকে। ঘরে ঘরে দারুণ জনপ্রিয় টম এন্ড জেরি– সেখানেও দেখুন, টমকে প্রায় প্রতিটা এপিসোডেই দেখা যায় টুডলসকে (টমের গার্লফ্রেন্ড) বা পাশের বাড়ির অন্য কোন মেয়ে বিড়ালকে আকৃষ্ট করার জন্য নানা হাস্যকর কাজকর্ম করতে। ডোরেমনেও সেই একই ব্যাপার! নবিতার বান্ধবী সিজুকার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য কত কী-ই না করে নবিতা। আরো অসংখ্য উদাহরণ দেয়া যায়।
এসব দেখে দেখে কি আপনার বাচ্চাটা সেক্সুয়াল ওয়িয়েন্টেশন নিয়ে ফেলছে না? চার নম্বর যে কেস স্টাডিটা উল্লেখ করেছিলাম, এটা বর্তমানে বিরল নয় আশপাশে তাকালেই খোঁজ পাবেন।
বিকল্প কার্টুন ও কার্টুনের বিকল্প
Is there any way out? প্রশ্নের উত্তরে আসার আগে কিছু কথা বলি। উপরে সংক্ষিপ্ত পরিসরে কার্টুনের যে কুপ্রভাবগুলোর আলোচনা করা হয়েছে তা সব শিশুর ওপরই সমানভাবে পড়বে না। আমরা জানি, শিশুর socialization এর অনেকগুলো প্রভাবক ও agent আছে। যেমনঃ তার পরিবার, ধর্ম, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, বন্ধুবান্ধব প্রভৃতি এবং মিডিয়া। বর্তমান প্রজন্মের ওপর মিডিয়ার প্রভাব অনেক অনেক বেশি। এজন্যই আমাদের এই কার্টুনের ভালো-মন্দ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
কল্পণাশক্তিই সৃষ্টিশীলতার মূল কথা, তাই শিশুর সৃজনশীল প্রতিভা বিকাশে Fantasyর প্রভাব অসীম, তাছাড়া শুষ্ক জ্ঞানী আলোচনার কথা শিশুরা শুনতেও চাইবে না, সেদিক দিয়ে শিশুর বিনোদনে ও ভালো কিছু শেখাতে ভালো কার্টুন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
অসংখ্য কার্টুনের থিম ও শিক্ষা বেশ চমৎকার যেমনঃ ওয়াল-ই, টিংকার বেল, বারবি থাম্বেলিনা, আইস এজ, আপ, ফাইডিং নিমো ইত্যাদির। সবকিছুরই ভালো খারাপ দুটোই আছে সেহেতু অনেক কার্টুন পজিটিভ অনেক কিছু শেখাবে তার সাথে নেগেটিভটাও, তাদের আপেক্ষিক গুরুত্ব বুঝে কোন কার্টুনটা আপনার শিশুকে দেখতে দেবেন তা আপনিই ঠিক করবেন।
আমার ছোটবেলায় অসম্ভব জনপ্রিয় ছিলো ইউনিসেফের অর্থায়ণে তৈরি ‘মিনা’ কার্টুন। এর প্রত্যেকটি পর্বই অসাধারণ ছিলো। আশা পোষণ করছি, বাংলাদেশে অদূর ভবিষ্যতে কেউ বাচ্চাদের জন্য ওরকম কোন কোয়ালিটি কার্টুন বানাবে, যাতে আনন্দের পাশাপাশি সুন্দর করে সহজে একেকটা বিষয় শিখিয়ে দেয়া যায়। বিটিভিতে প্রচারিত সিসিমিপুরও অনেক শিক্ষামূলক-বিনোদনমূলক একটি অনুষ্ঠান। এই ক্ষেত্রটিতে সরকারের লক্ষ্য আরোপ করা খুব প্রয়োজন।
এ বিষয়ে একজন সচেতন অভিভাবক- শিবলী মেহেদী ভাই পেশায় একজন সফটওয়্যার ডেভেলপার, ফেসবুকে ‘শিশু লালন পালন’ নামে একটা চমৎকার গ্রুপ চালান। বলেন যে, “অনেক অনেক ভালো কার্টুন বানালেই কিন্তু বড় সমস্যার সমাধান হবে না। মা-বাবার সচেতনতা খুব জরুরী। আমরা কার্টুনের নেগেটিভ প্রভাব নিয়ে যতই আলোচনা করি না কেন তা ফলপ্রসু হবে না যদি না যারা আসল ভিকটিম অর্থাৎ শিশুদের সাথে আলোচনা না করি।”
বাচ্চার সাথে আলোচনা করাটা খুব ফলপ্রসু- যে ও কী দেখলো কী শিখলো- কোনটা গ্রহণ করা উচিত, কোনটা বর্জন করা উচিত। গ্লোবালাইজেশনের এই যুগে সমস্ত পঙ্কিলতা থেকে আপনি আপনার শিশুকে হয়তো দূরে রাখতে পারবেন না কিন্তু ওকে শেখাতে পারবেন কীভাবে কাদায় থেকেও কাদা থেকে গা বাঁচিয়ে চলা যায়।
অধিক ভায়োলেন্ট কার্টুনগুলো শিশুকে দেখতে দেবেন না। অতিমাত্রায় কার্টুন আসক্ত শিশুকে নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে counselling করান একজন শিশুমনোবিজ্ঞানীর সাথে। শৈশব থেকেই বই পড়ার প্রতি আগ্রহী করে তুলুন। খেলতে খেলতে বিজ্ঞান শেখা যায় এমন বই কিনে দিতে পারেন। বাচ্চাদের জন্য চমৎকার কিছু শিক্ষা-বিনোদনমূলক সফটওয়্যার (যেমনঃ মাইক্রোসফট এনকার্টা কিডস) পাওয়া যায় বাজারে সেগুলো কিনে দিতে পারেন। ইন্টারনেটে শিশুদের উপযোগী বহু ওয়েবসাইট আছে, ইউটিউবে প্রচুর মজার মজার Educative ভিডিও আছে। সংগ্রহ করতে পারেন বিশিষ্ট শিশু সাহিত্যিক ইকবাল কবীর মোহনের শিশুদের জন্য লেখা বইগুলো। বর্ণ-পরিচয় হিসেবে আপনার তিন-চার বছরের শিশুকে কিনে দিতে পারেন ফররুখ আহমদের ‘হরফের ছড়া’র (বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি কতৃক প্রকাশিত) মতো বই। বাংলা শিশুসাহিত্য যথেষ্ট সমৃদ্ধ। আপনার শিশুর জন্য বই কিনুন।
টিভি নয় আপনার শিশুকে বইমুখী করুন। কার্টুন কম, গল্পের বই বেশী পড়তে দিন। কুসংস্কারাচ্ছন্ন গল্প নয় ইতিহাস ও বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের গল্প বলুন। ছোটবেলা থেকেই ধর্মীয় নৈতিকতাগুলো শেখান। সৃষ্টিশীল কাজে উৎসাহ দিন। মূলকথা অনেক অনেক চেষ্টা করুন, তাকে সময় দিতে, তার বন্ধু হতে, আপনার শিশু আপনার সবচেয়ে দামী সম্পদ।
মনে রাখা দরকার আমাদের কিছু ঐতিহ্য আছে, কিছু মূল্যবোধ আছে। সেগুলোকে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয়া, তা লালন করতে উৎসাহী করা আমাদেরই দায়িত্ব। স্বাস্থ্যকর খাবার, সুন্দর পোশাক আর ভালো স্কুলে পড়ানোর মাধ্যমে বাবা-মায়ের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না, শিশুর মনন গঠনে আপনাকেই সচেতন থাকতে হবে।
ফুট-নোটঃ কোন কথা আপনার কাছে ওভার রিঅ্যাকশন/অতি রঞ্জন মনে হলে বা আমার কোন ভুল থাকলে সংশোধন করে দেবেন। লেখাটি সমর্থন করলে ও এই বিষয়টিতে সচেতনতা বৃদ্ধি করা দরকার মনে হলে শেয়ার করবেন।
[লেখিকার বক্তব্যঃ পরিমার্জিত, যারা কিছু সমালোচনা করে আমায় সাহায্য করেছিলেন তাঁদের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ, আমি আরো কিছু চিন্তা করার খোরাক পেয়েছিলাম সমালোচনাগুলো থেকে]