ভালোভাবে লাইফ লিড করতে আসলে খুব সামান্য পরিমাণ সামগ্রীই লাগে। আমরা নিজেদের জন্য অনেকগুলো কৃত্রিম চাহিদা সৃষ্টি করে লাইফকে কমপ্লেক্স করে ফেলি। এই জিনিসটা আমি বুঝেছি অল্পদিন আগে।
আমি আগে স্মার্টফোন ব্যবহার করতাম। ফোনে কতরকম অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশান, সেগুলোর আপডেট আর নতুন অ্যাপ ইনস্টল-এসব নিয়ে মাঝেমধ্যেই ব্যস্ত থাকতে হত। মনে হত অ্যাপগুলো সত্যিই খুব প্রয়োজনীয়।
একদিন হঠাৎ সেই ফোন বাদ দিয়ে অল্পদামের একটা সাধারণ সেট ব্যবহার শুরু করলাম। কদিন পর দেখি মোবাইলের পেছনে আমার কোন সময়ই ব্যয় হচ্ছে না। কেবল কল করা আর অ্যালার্ম দেওয়া-মোবাইলের উপযোগিতা এখন আমার কাছে এটুকুই! যেসব অ্যাপকে 'অতি প্রয়োজনীয়' ভাবতাম সেগুলো ছাড়াই দিব্যি চলে যাচ্ছি।
দুনিয়াটাই এমন। একে যতবেশি কাছে টানবেন, এ আপনাকে তত শক্ত করে আঁকড়ে ধরবে। আপনার সময়গুলো কেড়ে নেবে। আপনার ব্যস্ততা বাড়িয়ে দেবে, মনের অভাব বাড়িয়ে দেবে, চাহিদা বাড়িয়ে দেবে। ভুলিয়ে রাখবে আপনার রব্বকে, রব্বের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যাবার দিনটিকে।
সাদাকা করতে যান, একই প্রবলেম উপস্থিত হবে। আপনার আলমারিভর্তি কাপড়। একদিন মনে হল এত কাপড় দিয়ে কী করবেন, গরিবদের দিয়ে দিই। অমনি শয়তান কাপড়গুলোর 'প্রয়োজনীয়তা' তুলে ধরতে উঠেপড়ে লাগবে। মনে হবে—আরে এই কাপড়টা তো প্রায় নতুন, এটা তো আমি পরতে পারি' কিংবা 'এতগুলো দান করে দিলে পরব কোনটা' ইত্যাদি। অথচ ড্রয়ারে রেখে দেওয়ার সময় সেগুলো আপনি ভুলেও পরে দেখতেন না, দেবার সময় এগুলোই কত দরকারি কাপড়! এসব হল কৃত্রিম চাহিদা, এসব হল ইল্যুসন, এসব হল ধোঁকা।
এই ধোঁকা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সিম্পল লাইফ লিড করার অভ্যাস করতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবা রাদিয়াল্লাহু আনহুমের জীবন ছিল কত সিম্পল। তাঁরা একবেলায় চিন্তা করতেন না পরেরবেলায় কী খাবেন। তাঁদের চিন্তা ছিল কেবল এবং কেবলমাত্র আল্লাহ্কে কীভাবে সন্তুষ্ট করা যায় তা নিয়ে। ফলে দুনিয়ার পেরেশানি, অন্তরের অভাব আর দারিদ্র্যের দুশ্চিন্তা থেকে আল্লাহ্ তাঁদের মুক্তি দিয়েছিলেন।
এবং পরিশেষে, একটি হাদীসে কুদসীঃ
আল্লাহ তা'য়ালা বলেছেন,
"হে আদম সন্তান, আমার ইবাদাতের জন্য তুমি নিজের অবসর সময় তৈরি কর ও ইবাদাতে মন দাও, তাহলে আমি তোমার অন্তরকে প্রাচুর্য দিয়ে ভরে দেব এবং তোমার দারিদ্র্য ঘুচিয়ে দেব । আর যদি তা না কর, তবে তোমার হাতকে ব্যস্ততায় ভরে দেব এবং তোমার অভাব কখনোই দূর করব না।" [তিরমিযী ২৬৫৪, ইবনে মাজাহ্ ৪১০৭]
দুনিয়াবি কৃত্রিম চাহিদাগুলো যদি আমাদের ইবাদাতের সময়গুলো কেড়ে নেয়, তবে এর চেয়ে দুঃখজনক আর কীই বা হতে পারে?