গত অল্প কিছুদিনে আমার পরিচিত, বন্ধু, দীনি ভাই, কিংবা আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে হতাশা দেখতে দেখতে একসময় নিজেই কেমন জানি হতাশ হয়ে পড়েছি। সেখান থেকেই এই লেখাটা লেখা। অন্য কারো জন্য কিনা জানিনা তবে লেখাটা আমার জন্য লেখা। আল্লাহ্ যেন আমাদের আল্লাহ্র উপর আস্থা রাখার তৌফিক দান করেন।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আমার এক বন্ধু চিটাগাং কলেজে অনার্স পড়ে। কলেজের পাশে বাসা হওয়ায় যখনি চিটাগাং যাই তার সাথে দেখা হয়। যতবারই দেখা হয় প্রতিবারই সে আমাকে দেখে হা হুতাশ করে। লাস্ট বার হা হুতাশের মাত্রা এত বেশি ছিল মেজাজ খারাপ অবস্থা। ‘দোস্ত! তুই তো ঢাবিতে পড়িস, আর আমরা কোথায়! তোর অর্ধেকও হতে পারলাম না’—ব্লা ব্লা ব্লা। জিজ্ঞেস করলাম, ‘তুই তো এখনো বেঁচে আছিস, সুস্থ আছিস, তিন বেলা খেতে পারিস, কি পারিস না? ’উত্তর দিল, ‘এটাকে কি বেঁচে থাকা বলে? শিয়ালের মত বেঁচে থেকে কি লাভ? বাঁচলে সিংহের মত বাঁচব!!” খুব কড়া কিছু কথা শুনাতে ইচ্ছে করছিল। শেষে একটি কথাই শুধু বললাম, ‘যে জীবনের জন্য তুই সিংহের মত বাঁচতে চাস, সেই জীবনই একদিন তোকে শিয়াল বানিয়ে দেবে!’
মানুষের জীবনে পজিটিভ আর নেগেটিভ সাইড দুইটাই পর্যায়ক্রমে ঘটে। এমন কোন মানুষ কি দেখাতে পারবেন যে কোনদিন কাঁদেনি? এমন কোন মানুষ কি দেখাতে পারবেন যে কোনদিন দুঃখ পায়নি? আবার ঠিক একইভাবে এমন কোন মানুষও দেখাতে পারবেন না যে কোনদিন সাফল্যের আনন্দে হাসেনি! দুঃখ বিষয়টা আছে বলেই আনন্দের মুহূর্তগুলো এত মধুর হয়ে উঠে। আমরা কেন ভুলে যাই শুধু প্লাস আর প্লাস মিলেই প্লাস হয়না, মাইনাস আর মাইনাস মিলেও প্লাস হয়। প্লাস মাইনাসের কাঁটাছেড়া সবকিছু মিলেই তো এই ছোট্ট জীবনের পাণ্ডুলিপি। এই পাণ্ডুলিপি নিয়ে একদিন মহান রবের সামনে দাঁড়াতে হবে। আসল সাফল্য তো সেদিন। আসল প্রাপ্তি তো সেদিন। আসল সুখের সংজ্ঞা তো সেদিনই পাওয়া যাবে।
এবার ঢাকা আসার দিন আমার মা সে কি কান্না! আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বুলিয়ে বুঝাচ্ছে ঢাকার অবস্থা খুব খারাপ। কোনভাবেই যেন বাইরে না বেরোই। আমার বড়ভাই হেফাজতের মিছিলে গিয়েছিল সেজন্য আরেক কান্না। কি দরকার এসবের? আল্লাহ্ রাসুল চিনতেছে, নামাজ দোয়া পড়তেছে হইছে তো! এমনিতেই চারদিকে দুশমন। কখন কোনদিকে ফাঁসায় দেয়। সারাজীবন কষ্ট করছি আমরা। এখন আল্লাহ্ সহি সালামতে রাখছে, একটু ভালো আছি। আর এর মধ্যে কি দরকার এসব ঝামেলায় যাওয়ার। আমারে কিসে পাইছে এসবের পেছনে ছোটার! কথাগুলো আমার মায়ের……
একসময় আমাদের পরিবারের অবস্থা এরকম ছিলনা। আমি ছোটবেলায় দেখেছি আমাদের চাচাদের বাড়ির বিদ্যুতের লাইন থেকে আমাদের বাড়িতে আলো জ্বলত। চাচাদের সাথে ঝগড়া হলে সেই বিদ্যুতের লাইন কেটে দেওয়া হতো। কারো হাতে মোবাইল দেখলে সেটা হাতে নিয়ে একটু নেড়েচেড়ে দেখতাম। একবার স্কুলের পিকনিকের টাকার জন্য আমার মাকে বলতে গিয়ে আর বলিনি—কোনদিন কিছু চাইনি। টাকা দিতে না পারলে হয়তো মা কষ্ট পাবে সেই ভেবে! বন্ধুরা সবাই পিকনিকে গেল—আমি ছাড়া!
সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। অন্যের বাসায় খেলা দেখতে যেতাম বলে আমার জন্য টিভি কেনা হয়েছে। একসময় আমার কাছে তিনটা মোবাইল ছিল। ঢাকা থেকে গেলে ইলিশের খরাতেও আমার জন্য হাজার টাকা দিয়ে ইলিশ মাছ কেনার বিলাসিতা আমার ভাই দেখায়! এই যে খারাপ থেকে অবস্থা ভালো এটা একটা সাফল্য, বিরাট সাফল্য—সমাজের চোখে।
আমাদের সহজ সরল বাবা মায়েদের কাছে এটাই সাফল্য, ভালো থাকাটাই সাফল্য। আমার মা সেই সাফল্যে কোন আঘাত আসার ভয়ে কাঁদে। আল্লাহ্ আমাদের ভালো রেখেছে সেটা নিয়ে সন্তুষ্ট থেকে সেই সন্তুষ্টিতে ব্যাঘাত ঘটছে সেই কারণে কাঁদে। আমার মাকে আমি বুঝাতে পারিনা ‘… যাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হল এবং জান্নাতে দাখিল করা হল, সেই সফলকাম হল।’ [৩:১৮৫]
আমার মাকে আমি বুঝাতে পারিনা আমরা এই দুনিয়ায় পরীক্ষা দিচ্ছি। বিপদ-আপদ, কষ্ট, খারাপ সময় দিয়ে আল্লাহ্ আমাদের জান্নাতের জন্যই প্রস্তুত করছেন। আমার মাকে আমি বুঝাতে পারিনা যে সাফল্যের পেছনে আমরা ছুটি সেটা সাফল্য নয়—মরীচিকা। সাফল্য এপারে নয়, সাফল্য পৃথিবীর ওপারে …
আমার ডিপার্টমেন্টের প্রথম এক হিন্দু মেয়ে। স্কুল জীবনে আমি সবসময় প্রথম হতাম সেখান থেকে আমার c.g.p.a এখন টেনেটুনে কোনমতে চলে। সেমিস্টারের রেজাল্ট দিলে পুলাপাইনের অবস্থা দেখে মাথা হ্যাং হয়ে যায়। এই তোর রেজাল্ট কি, অমুকের রেজাল্ট কি, অমুক এত কি করে পাইল, অমুক এত কম পাইল কেন…… উফফফফ!! একজন জিজ্ঞেস করল, “তোর অবস্থা কি?” "এই তো! কোনমতে আছে!" "তোর?" "আরে বলিস না, খারাপ হইছে!" "কত?" "আরে কম! 3.70।" তারপর কয়দিন আমার হতাশাবাদি বন্ধুদের c.g.p.a এর জন্য হতাশা দেখতে দেখতে নিজেই হতাশ হয়ে পড়ি। আমার কারণে নয় তাদের কারণে। সত্যি বলছি আল্লাহ্ আমাকে এসবের জন্য কোনদিন হতাশ করেননি। আমাকে এসব নিয়ে এখন টেনশনে রাখেনি। রাসুল (সঃ) বলেছেন, ফজরের দুই রাকাত নামাজ পৃথিবী এবং এর মধ্যে যা কিছু আছে সবকিছু থেকে উত্তম। সুবাহানাল্লাহ! একজন মুশরিক কাফেরের কাছে এই কথার কোন মূল্য নেই, কোন বাস্তবতা নেই। কিন্তু আমরা তো মুসলিম। আমরা তো বিশ্বাস করি। আমাদের আচরণ কেন অবিশ্বাসীদের মত হবে। যা পড়েছি, সেভাবেই পরীক্ষা দিয়েছি, সেভাবেই রেজাল্ট হয়েছে। ব্যস! কিন্তু আপনি যখন অন্তরের বিশ্বাস নিয়ে ফজরের নামাজটা আদায় করবেন তখনি ভাববেন আপনি এখন অনেক অনেক কিছুই পেয়েছেন যা অনেকেই…অনেকেই পায়নি। আপনার এই সম্পদের নিচে আছে বিল গেটস এর সম্পদ, রোনালদোর বার্ষিক আয়, লেওনেল মেসির ব্যালন ডি অর, এ-আর-রাহমানের অস্কার, শাহরুখ খানের ফিল্মফেয়ার, কোহিনুরের হিরার মূল্য থেকে আপনার এই নামাজের মূল্য অনেক বেশি। অনেক অনেক বেশি। কখনো এভাবে ভেবেছেন? ভাবলে কি বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়? কষ্ট হওয়ার কিছু নেই। একদিন আল্লাহ্র সামনে যেদিন দাঁড়াবেন, যেদিন পুরস্কার আর শাস্তির ফয়সালা হবে, আখিরাতের সেই সময়ে আপনি আপনার এই সম্পদ বুঝে পাবেন। আল্লাহ্র শপথ, আপনি আপনার সম্পদ বুঝে পাবেন।
গার্লফ্রেন্ড!! উফফফফফ! এক বিশাল দীর্ঘশ্বাসের নাম। আমার বন্ধুদের যারা এই বিষয়টা জোগাড় করতে পেরেছে তারা তো আছেই কিন্তু যারা জোগাড় করতে পারেনি তাদের অবস্থা দেখে আমি শুধু ভাবি, এরা মনে করে জীবনে এরা কিছুই করতে পারলনা। একটা গার্লফ্রেন্ড জোগাড় করতে পারল না, একটা মেয়ে পটাতে পারলনা! ইশ! কি আফসোস তাদের! আমি মুখে দাঁড়ি, টাখনুর উপর প্যান্ট, মেয়ে দেখলেই দৃষ্টি নামিয়ে নেওয়া, সহজ সরল হুজুর ছেলেটার কথা বলছি। টগবগে যৌবনের বাঁধ ভাঙা জোয়ারে যে সংযমের কাঁটাতার দিয়েছে তাঁর কথা বলছি। তেলতেইল্লা বদনের আধুনিকার শরীর থেকে যে নিজেকে আল্লাহ্র জন্য হেফাজত করেছে আমি সেই ছেলেটার কথা বলছি। ভাই আমি আপনাকেই বলছি। হতাশ হবেন না। ‘I don’t have a girlfriend’ এটা হয়ত অনেকের কাছে আঙ্গুর ফল টকের মত। কিন্তু একজন মুসলিমের কাছে এটা ধৈর্য আর ঈমানের রসদ। পৃথিবীর কোন না কোন প্রান্তে কেউ একজন আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। কেউ না কেউ একজন আপনার মতই আল্লাহ্র কাছে তাঁর সঙ্গীর জন্য দোয়া করে। কেউ না কেউ একজন আপনার জন্যই সবকিছু থেকে নিজেকে হেফাজত করে। আর যদি এই পৃথিবীর হিসেব না মিলে তাহলে আপনাকে সেই জান্নাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যেখানে থাকবে চোখধাঁধানো বাগান, ঝর্ণাধারা, অদ্ভুত সুন্দর আকাশ। আপনি হেঁটে যাবেন আর আপনার সাথে হেঁটে যাওয়ার জন্য জান্নাতের রমণীরা বায়না ধরবে। আপনার হাতে হাত রাখতে, আপনার কাঁধে মাথা রেখে জোছনা দেখতে তারা প্রতিযোগিতা করবে। ক্লাসের সুন্দরী যে মেয়েগুলো আপনাকে খ্যাঁত বলে পাত্তাই দিত না তাদের চেয়ে এরা অনেক চক্ষুশীতলকারিণী। রাস্তার ধারে, অন্ধকার কফি শপে, রিকশা সিএনজিতে প্রেম প্রেম খেলা করে বেড়ানো যে তরুণদের দেখে আপনার হতাশ লাগতো তাদের চেয়ে আপনার ভালো লাগা সেদিন বহুগুণ হবে। প্রশান্তির মাত্রা হবে অকল্পনীয়। একবার ভেবে দেখেছেন? স্বপ্ন দেখেছেন কখনো এভাবে?
খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে কিছু ভাইদের কাছে খুব অপ্রত্যাশিত কিছু হতাশা দেখেছি। অমুকের ফেসবুক স্ট্যাটাসে হাজার হাজার লাইক। অমুক এত জনপ্রিয়! অমুকের ফেসবুক আইডিতে মেয়েরা লাইন দেয়। এসব নিয়ে হতাশা! amazing! বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় এরা দ্বীনদার। এদের কাছে সাফল্যের মানদণ্ড কিনা লাইক কমেন্ট? আমি এমন ভাইদের কথা জানি যারা দ্বীনের জন্য কাজ করেন অথচ মানুষ জানেইনা যে কাজটা অমুক ভাই করেছে। ফেসবুকে সেদিন এক শায়খের ফেসবুক আইডি দেখলাম। এই শায়খের কথা আমি অনেক জনের কাছে শুনেছি। একজন দ্বীনের দ্বায়ী। বিভিন্ন দেশে গিয়েও লেকচার দেন। উনার টাইমলাইনে পোস্ট দেখলাম। লাইক পড়েছে দুইটা, তিনটা। সুবাহানাল্লাহ। এই মানুষটি দ্বীনের জন্য কি কাজ করেন সেটা কি আমরা জানি? আল্লাহ্ ভালো জানেন। কিন্তু ফেসবুকের লাইক কমেন্ট কি এই শায়খের সাফল্যের মানদণ্ড? শুধু এই শায়খের নয় এই ভার্চুয়াল দ্বীন কারোরই সাফল্যের মানদণ্ড নয়। আল্লাহ্ রোজ কেয়ামতের দিন ফেসবুকের লাইক কমেন্ট গুনবেন না। দেখবেন অন্তরের তাক্বওয়া। ফেসবুক, ব্লগ, ভার্চুয়াল জনপ্রিয়তা দেখে যারা হতাশায় ভোগেন তাদের জন্য শুধু একটা কথাই বলি, এই ভার্চুয়াল দ্বীন হয়তো সেসব দ্বীনদারের আখিরাত কঠিন করে ফেলতে পারে যেখান থেকে আপনি হয়ত মুক্ত! পার্থিব আস্ফালন থেকে সাফল্যের সংজ্ঞা নির্ধারণের অভ্যাস বাদ দিয়ে আখিরাতের জন্য বাঁচতে শিখুন। প্রকৃত সাফল্যের পেছনে ছুটুন……
সূরা আল বুরুজে কিছু মানুষের কথা বলা হয়েছে যাদেরকে আল্লাহর উপর ঈমান আনার কারণে আগুনের গর্তে ফেলে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল। জীবনের পেছনে ছোটা, এই পৃথিবীর সেকুলার সাফল্যের সংজ্ঞায় সাফল্য খোঁজা মানুষের কাছে এই ঘটনা শুনে মনে হবে, আহা! মানুষগুলো মরে গেল!! কিংবা হয়ত বলবে তারা কি বোকা ছিল!! জান বাঁচানো না ফরজ?? কিন্তু আল্লাহ সেই আগুনে পুড়ে মরা মানুষগুলোকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন,
”… এটাই মহাসাফল্য।” [সূরা আল বুরুজঃ ১১]
আজ মুসলিম মুজাহিদিনরা স্বজাতির কাছেই সন্ত্রাসী, উগ্রবাদী, বর্বর হিসেবে প্রতীয়মান। মুজাহিদিনরা যখন তাগুতের বিপক্ষে লড়াই করে তখন নিজ মুসলিম উম্মাহর কাছেই এরা হয় ব্রেইনওয়াশড, পথভ্রষ্ট। আল্লাহর পথে নিজেদের প্রাণ বিলিয়ে দেওয়া এই মানুষগুলো আমাদের কাছে কোন স্বীকৃতি না পেলেও আসুন দেখি আল্লাহ কি বলছেন,
”আর যারা আল্লাহর রাহে নিহত হয়, তাদেরকে তুমি কখনো মৃত মনে করোনা। বরং তারা নিজেদের পালনকর্তার নিকট জীবিত ও জীবিকাপ্রাপ্ত। আল্লাহ নিজের অনুগ্রহ থেকে যা দান করেছেন তার প্রেক্ষিতে তারা আনন্দ উদযাপন করছে। আর যারা এখনও তাদের কাছে এসে পৌঁছেনি তাদের পেছনে তাদের জন্যে আনন্দ প্রকাশ করে। কারণ, তাদের কোন ভয়ভীতিও নেই এবং কোন চিন্তাভাবনাও নেই।” [সূরা আলে ইমরান : ১৬৯, ১৭০]
হযরত বিলাল (রাঃ) এর মৃত্যুর সময় তার স্ত্রী পাশে ছিলেন। তিনি স্বামীর কষ্ট দেখে বললেন, আহা! কি কষ্ট! হযরত বিলাল উত্তর বললেন, "না কষ্ট না আনন্দ! আজ আমি আমার বন্ধুদের সাথে মিলিত হব। আজ আমি রাসুল (সঃ) ও তার সাথীদের সাথে মিলিত হব।” এই সেই বিলাল যিনি সারাজীবন ইসলামের জন্য কষ্ট করে গেছেন, অত্যাচার সহ্য করে গেছেন। কুচকুচে কালো হাবশি দাস, অথচ রাসুল(সঃ) তাকে আজানের দায়িত্ব দিতেন। জীবনে আপনার আমার মত কিছুই না পেয়ে বিলালরা জান্নাতের দরোজা দেখেছেন ওপারের জন্য বেঁচেছেন বলেই।
আবু সুফিয়ান (রাঃ) ইসলাম গ্রহণের পর এক যুদ্ধে মুসলিমদের পক্ষে যুদ্ধ করতে গেলেন। যুদ্ধে তীরের আঘাতে তাঁর একটা চোখ কোঠর থেকে বেরিয়ে এল। তিনি চোখটি হাতে নিয়ে রাসুল (সঃ) এর কাছে গেলেন এবং বললেন, আমার এই চোখটিও পূর্বের লোকটির মত ভালো করে দিন (একবার এরকম একজনের চোখ রাসুল (সঃ) ভালো করেছিলেন।) তখন রাসুল (সঃ) বললেন, আপনি চাইলে আপনার চোখ আমি ভালো করে দিতে পারি কিংবা আপনি চাইলে এর প্রতিদান আল্লাহ্র কাছ থেকেও নিতে পারেন। আবু সুফিয়ান বললেন, আমি এর প্রতিদান আল্লাহ্র কাছেই নেব। এই বলে তিনি নিজের চোখটি মাটিতে ফেলে পা দিয়ে পিষে ফেললেন। আজকের একজন মুনাফেক, ফাসেক কিংবা নিচু লেভেলের মুসলিমও বলবে আবু সুফিয়ান কি বোকাই না ছিল!! নিজের চোখ সুস্থ করার সুযোগ পেয়েও হাতছাড়া করল। এখানেই একজন বিশ্বাসী আর অবিশ্বাসীর পার্থক্য। একজন অবিশ্বাসী দুনিয়ার সাফল্য খুঁজে, প্রতিদান খুঁজে। আর বিশ্বাসী আখিরাতে আস্থা রাখে। পৃথিবীর ওপারে আল্লাহ্র কাছে প্রতিদানের জন্য আশায় বুক বাঁধে।
দুনিয়ার সাফল্যের জন্য চোখের ঘুম হারাম করতে পারি, প্রিয়জন হারানোর ভয়ে টেনশনে মাথা নষ্ট করতে পারি, প্রিয়জনের মৃত্যুতে বিলাপ করে কেঁদে কেঁদে বুক ভাসাতে পারি কিন্তু আসল জীবনের মর্ম কেউ বুঝিনা। মানুষের এই অর্থহীন চোখের পানি দেখলে ইন্টারের ফটোগ্রাফ কবিতাটার কথা মনে পড়ে। কাঁদতে কাঁদতে দুঃখের নদীটা একসময় শুকিয়ে যায়। সবচেয়ে প্রিয় বস্তু আর প্রিয় মানুষকে হারানোর ভয়ে কাঁদে। পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার ভয়ে আরও বেশি করে কাঁদে। শুধু কাঁদে না অবিনশ্বর জান্নাতে যেন একসাথে থাকতে পারে সেই জন্য। শুধু কাঁদে এই নশ্বর পৃথিবীতে ছবির ফ্রেমে হ্যাপি ফ্যামিলি হয়ে বেঁচে থাকার জন্য। পৃথিবীর ওপারের সাফল্য আমাদের কাছে বহু বহু দূরের কোন রূপকথা যেন। এই ক্ষুদ্র জীবনের নাটুকেপনা আবেগ একদিন মিথ্যে হয়ে যাবে যেদিন মহান আল্লাহ্র সামনে দাঁড়ানোর সময় হবে সেদিন। পৃথিবীর ইসলামহীন ভুরি ভুরি সাফল্য বেলুনের মত চুপসে যাবে যেদিন জান্নাতের শান্তির বাগানে নয়, জায়গা হবে জাহান্নামের কঠিন আগুনে। আজকের পৃথিবীর মানুষগুলোর সাফল্যে হতাশ কিংবা আল্লাহ্র পথে ত্যাগের জন্য কষ্টে, দুঃখে চোখের পানি ফেলা সেই ভাইদের বলছি—কাঁদিস না ভাই, মন খারাপ করিস না! সাফল্য এপারে নয়, সাফল্য পৃথিবীর ওপারে …