ভার্সিটির শেষ বর্ষে বিয়ে করলাম, বর্তমান আদু ভাই টাইপ সমাজে এটা নাকি অল্প বয়সে বিয়ে করা। যাই হোক, আমি আর আমার বউ সি এন জির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছি, হঠাৎ ভার্সিটির এক স্যারের সাথে দেখা, আমার মত একজন দাঁড়িওয়ালা লোককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো এক নিকাবির পাশে। ব্যস, স্যার ২+২=৪ মিলায় দিলেন।
– কি ব্যাপার! তুমি বিয়া করসো নাকি!
– জ্বি স্যার!
– হুহ! (স্যার একটা অদ্ভুত শব্দ করলেন, উচ্চারণটা হুহ+ঘুত এর কাছাকাছি, অবজ্ঞাসূচক ও ব্যাঙ্গাত্মক। কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তিনি তার আয়নার মত চকচকে শেভ করা গালে বিকালের রোদ প্রতিফলিত করতে করতে ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গেলেন)
ফিতনা থেকে বাঁচার জন্য ও নিজের পবিত্রতা রক্ষার জন্য আল্লাহর দেয়া সমাধান গ্রহণের বিকল্প নেই। যখন অনুভব করলাম সমাধান গ্রহণের সামর্থ্য ও তাওফিক উভয়টাই আল্লাহ করে দিয়েছেন তখন আর দেরি করা নির্বুদ্ধিতা বলে মনে হল।
সমাধানের প্রথমটা হল সিয়াম বা চলতি কথায় রোযা রাখা, আর দুই নাম্বার বিয়ে করা!
১ নাম্বার সমাধানটা স্থায়ী সমাধান নয়, বিশেষ অবস্থায় অস্থায়ী সমাধান,
আর ২ নম্বর হচ্ছে স্থায়ী ও অপেক্ষাকৃত উত্তম সমাধান।
দাওয়াতের কাজ নাকি ঘর থেকে শুরু করতে হয়। আমার আব্বা-আম্মা সমাজের টিপিক্যাল সেমি-সেকুলার ট্রেডিশনাল মুসলিম আব্বা আম্মা। তাদের সাথে কয়েক সেশন আলোচনা করে ক্লান্ত হলাম, অবশেষে তারা অনুরোধে ঢেঁকি গিলে ফেললেন।
বিয়ে করব!– এ কথাটা শোনার পর নদী দুই ভাগ হয়ে গেল। একদিকে দজলা, আরেকদিকে ফোরাত। কেউ পক্ষে, কেউ বিপক্ষে।
কেউ দাঁড়ায় পাশে, আর কেউ দাঁত বের করে হাসে।
বলাই বাহুল্য যারা মুরুব্বী গোছের আত্মীয় তারা সামনে মুরুব্বি’আনা ধরে রাখার জন্য সরাসরি দাঁত বের করে না হাসলেও ভিতরে ভিতরে ঠিকই কাশি আটকাচ্ছিলেন বুঝা যেত। আর সমবয়সীদের স্বভাবই হচ্ছে ‘তাল দেওয়া’; যে আন্তরিকভাবে পরামর্শ দিবে সেও বলবে, “হুম, ঠিক, বর্তমান সময়ে এই ফিতনার যুগ। পবিত্রতা রক্ষার জন্যে বিয়ে করা দরকার। তাছাড়া ইউ নো, সবকিছুই নির্ভর করে নিয়তের উপর। সেদিক থেকে সব কাজই ইবাদত’; কেউ কেউ আবার এক কাঠি সরেস, সুযোগ পেয়ে একটা জাল হাদীসও শুনিয়ে দিতে ছাড়ল না। “হায়! বিবাহিতের এক রাকা’আত নামায, অবিবাহিতের সত্তর রাকা’আত নামাযের সমান।” পালাও! কৈ আইলাম!
ফলে একদিকে সত্যিকার সৎ বন্ধুদের সদুপদেশ, আর আরেকদিকে কানাঘুষাকারীদের কারণে ‘কি একটা অবস্থা।’
এরই মধ্যে আবার স্যারের ঐ অদ্ভুত “হুত, ঘুত” টাইপ শব্দ করে ভিড়ের মধ্যে অন্তর্ধান হওয়া।
যাই হোক, ব্যক্তিগত আলোচনা করা মূল প্রসংগ না। মূল প্রসংগ হল বিয়ের বয়স কোনটা ঠিক?
বিয়ে একটি সুন্নাহ, যা সামর্থ্যবানের উপর ওয়াজিব। এবং অবশ্যই একটি ইবাদত।
অল্প বা বেশি বয়সে বিয়ে নয়, সঠিক সময়ে বিয়ে করুন।
শারীরিক, মানসিক, আর্থিক এই তিনটি বিষয়ের মাঝে ভারসাম্য রক্ষা করে পাত্রী খোঁজা শুরু করে দিন। শারীরিক সামর্থ্য ব্যক্তি নিজেই ভাল অনুভব করতে পারবে, আর মানসিক সামর্থ্য আছে কিনা নাই সেটা ঈমান ও তাকওয়ার সাথে সমানুপাতিক। কিছুদিন আগেই এক ভাইয়ের লেখা পড়লাম, চমৎকার লিখেছেন,
“কথাটা চিন্তা করে মাথাটা চক্কর দিল।
আমরা কি নাবালক হয়ে যাচ্ছি? দুনিয়া এগিয়ে যাচ্ছে, তার সাথে এগিয়ে যাচ্ছে সাবালকত্বের বয়সসীমা । ১৬-১৮-১৯-২১-২৪ এরপর কত? ইতিহাসে দেখি ১৫ বছর বয়সে রাজত্ব পেয়ে বাকি ১৫ বছরে বিশ্বজয় করতে। মুহম্মদ বিন কাসিম ১৭ বছর বয়সে সিন্ধু জয় করেছিলেন। তিনি ছিলেন হাজ্জাজ বিন ইউসুফের মেয়ে জামাই। তারমানে তিনি বিবাহিত ছিলেন। কিন্তু তাঁর চেয়ে ৭ বছরের বড় আজকের যুবকটি স্যরি শিশুটি এখনো নাবালক…”
অবশ্য বলাই বাহুল্য, এই নাবালকত্ব কৃত্রিম ও আরোপিত, অনেকাংশে স্বেচ্ছা নির্বাচিত। যেমন বিয়ের কথা বললেই অনেকে বয়সের কথা চিন্তা করে। আবার অপরদিকে ঠিকই ক্লাস সেভেন-এইট থেকেই টাংকির পিছনে ফিল্ডিং করা শুরু হয়ে যায়। ফলে ক্রমেই দেখা যায় নানাবিধ অনাচার ও অশ্লীল আচরণ। এমনকি জুমার খুতবা শুনতে গিয়ে একদিন খতীব জনৈক মুফতি বলেই ফেললেন, ‘আজকালকার ক্লাস ওয়ান টু পড়ুয়া বাচ্চারাও যা জানে তা আমরা এখন পর্যন্ত এই পঞ্চাশ বছরেও জানি না। কাজেই এদের সামনেও মহিলারা পর্দা করবেন।” যথার্থই বলেছেন।
বাকি থাকল আর্থিক সামর্থ্য, যাদের আছে তাদের ব্যাপারে কথা বলা নিষ্প্রয়োজন। আর যারা মনে করছেন ‘আমার টেহা নাই’, তাদের জন্যে এই লেখাটি, বিয়ে করতে না পারলে সাওম???
তিন ব্যক্তিকে আল্লাহ অবশ্যই সাহায্য করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তারা হচ্ছেন - ১. মুজাহিদ; ২. মুকাতিব; ৩. আর পবিত্রতা রক্ষার জন্যে যে ব্যক্তি বিয়ে করতে চায়। [দেখুন সহীহ তিরমিযি ১৬৫৫]
আল্লাহর উপর ভরসা করুন, যদি বিয়ে করার কোন উপায়-ই নাই থাকে তাহলে আর কি করা, সবরের পরীক্ষা দিন, ইনশা আল্লাহ প্রতিদানে আল্লাহ আপনাকে আরো ভালো কিছু দান করবেন।
“যারা বিবাহে সামর্থ নয়, তারা যেন সংযম অবলম্বন করে যে পর্যন্ত না আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেন…” [সূরা আন-নূর ২৪:৩৩]
“…তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে” [সূরা আর-রুম ৩০:২১]
“আমি পুরুষের জন্য নারীর চেয়ে বড় কোন ফিতনা রেখে যাচ্ছি না।” [বুখারী ও মুসলিম]
ফিতনার দরজায় গিয়ে দাঁড়ালেন। ফিতনার মধ্যে পড়লেন, পাশ-ফেল কিছু একটা করলেন।
এর থেকে সেই কঠিন পরীক্ষার দিকে না যাওয়াই উত্তম নয় কি?
ইব্রাহীম ইবন মায়সারা বলেনঃ তাউস আমাকে বলেছেন, “হয় বিয়ে করো, নইলে আমি তোমাকে সেই কথাই বলবো যা উমার বলেছিলেন আবুল যাওয়ায়িদ কে, ‘দুইটা কারণ ছাড়া তোমার অবিবাহিত থাকার আর কোন কারণ দেখি না। হয় তুমি অক্ষম, নইলে অসচ্চরিত্র লোক।”
[বিস্তারিত জানতে দেখুন Advice to one who does not want to get married]