প্রিয় মুক্তমনা,
অমুসলিমদের সালাম দেয়া যায়না বলে দিতে পারলাম না। তাছাড়া সালামের মত একটা গোঁড়া ধর্মীয় বিষয় নিয়ে আপনার মাইন্ড করারও কথা নয়। যাই হোক, আজ আপনাকে লিখতে বসেছি নিতান্তই বাধ্য হয়ে। আপনার সাথে কোন রকমের কথা বলার ইচ্ছে আমার নেই। বিন্দুমাত্রও নেই। বিশ্বাস করুন, আমার একদলা থুথু বের হয়ে আসে আপনাকে লেখার সময়। কেন জানেন? নাহ। আপনি নাস্তিক কিংবা ফ্রী-থিঙ্কার সেই কারণে না। আপনার ডাবল স্ট্যান্ডার্ড এর কারণে। দ্বিমুখী নীতির কারণে। আমি দ্বিমুখী নীতিবান মানুষদের অন্তরের অন্তস্থল থেকে ঘৃণা করি।
আপনি তেড়ে আসছেন? আপনি দ্বিমুখী নন দাবি করছেন? আমি মিথ্যা বলছি? তার আগে আসুন একটু গল্প করা যাক।
আপনি নাস্তিক। আল্লাহ্র অস্তিত্বে অবিশ্বাসী। আপনি ব্লগ লেখেন। আপনি ফেসবুকে লেখেন। সবখানেই একই কথা। ইসলামের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার। আপনি আল্লাহকে ঘৃণা করেন। আপনি আমাদের রাসূলকে [সাঃ] ঘৃণা করেন। তাঁর চরিত্র আপনার কাছে লম্পটের মত লাগে। নারীলোভীর মত লাগে। মিথ্যেবাদীর মত লাগে। আর ইসলাম? সেতো পুরাই একটা ভুয়া জিনিস। এই ইসলামের দোহাই দিয়ে মানুষ কত কি করছে! এই ইসলাম নামের ভূত মানুষের মাথা থেকে নামাতে হবে। কিভাবে নামানো যায়? শর্টকাট আছে কি?
আছে। গণহারে ব্লগিং আর ফেসবুকিং। রাসূলকে [সাঃ] গালি দেয়া। তাঁর চরিত্র নিয়ে অকথ্য ভাষায় পোস্ট দেয়া, মুসলিমদের বিভিন্ন আচারকে বিদ্রুপ করা। মুসলিম মেয়েরা বস্তা পরে, সালাত সমকামিতা উস্কে দেয়, এইসব বলা। কেন বলবেন? কারণ এগুলা পাবলিক খায়। বেশ ভালো করেই খায়। স্রোতের বিপরীত যে কোন কিছুকেই মানুষ দ্বিতীয়বার মাথা ঘুরিয়ে দেখে। ৯০ শতাংশ মুসলিমের দেশে আপনি যখন এমন অমৃত বাণী পোস্ট করবেন, তখন পাবলিক দ্বিতীয়বার দেখবে। স্রোতের বিপরীতে যে! যারা আপনার মতই চিন্তা করে, কিন্তু সাহস করে বলতে পারেনা, তারা টুপ করে লাইক দিয়ে যায়। আপনার পোস্টে লাইক আর শেয়ার পড়তে থাকে। ১০, ১৬, ২৫, ৩০ করে করে হাজারটা পর্যন্ত লাইক। আপনি তারকা বনে যান। এবার আপনার সাহস বেড়ে যায়। ভক্তকুল উৎসাহ দেয়, “ভাই চালায়া জান। মোমিন মছলমানদের *** *** ইরা দেন।” আপনার বুকে তেজ আসে। আপনার ইসলাম বিদ্বেষী লেখা বাড়তে থাকে। আপনি আপনার ব্লগিং এর প্রায় পুরো সময়টা দিলেন আল্লাহকে গালি দেবার পিছনে। মুহাম্মাদ [সাঃ] কে গালি দেবার পিছনে। আপনি পুরোপুরি ভার্চুয়াল ইসলাম বিদ্বেষী হয়ে গেলেন। এভাবে চলতে লাগল আপনার বিজয়রথ।
হঠাৎ দেশে ঘটে গেলো এক সে--ই ঘটনা। দেশের মানুষ রাজাকারের বিচারে সোচ্চার হয়ে ওঠে। সবাই ঘর ছেড়ে রাস্তায় নেমে পড়ে। এক দফা এক দাবি। রাজকারের ফাঁসি চাই। ব্লগারদের শুরু করা এই বিপ্লবে আপনিও সামিল। নেমে গেলেন রাস্তায়। মুহুর্মুহু স্লোগানে কাঁপালেন পুরো প্রজন্ম চত্বর। সে এক অন্য অনুভূতি।
কিন্তু না। কাবাব মে হাড্ডি। কিছু মৌলবাদী মুসলিম শুরু করলো প্রতিবাদ। ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছিলেন আপনারা। এতেই তারা চটে গেলো। কি বিপদ! এবার আপনি আবার লেখালেখি শুরু করলেন। তাদের লাড়ায়া দিলেন। তারাও প্রতিবাদ তুললো কোন মুসলিম ইসলামি রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি তুলতে পারেনা। যদি এই ধরনের ইসলামি বিরোধী কোন দাবি উঠে থাকে, তবে তা উঠেছে আপনার মত নাস্তিকদের মুখ থেকেই। মুহূর্তেই চাউর হয়ে গেলো এই খবর। ফেসবুকে, ব্লগে মৌলবাদীরা প্রতিবাদ শুরু করলো। আপনার এবং আপনার সমমনা মুক্তমনাদের গোমর ফাঁস করতে শুরু করে দিলো। গোদের ওপর বিষফোঁড়া হিসেবে কিছু সরলমনা আন্দোলনকারীও সন্দেহের তীর ছুড়লো আপনাদের দিকে। আপনার কপালে ভাঁজ পড়লো। আপনি নেমে পড়লেন শুদ্ধি অভিযানে। যে করেই হোক নিজের ইসলাম বিদ্বেষী লেভেলটা কমাতে হবে। তা না হলে যদি মৌলবাদীদের দাবির সাথে আপনার ব্লগিং মিলে যায়? হুড়হুড় করে আপনি আপনার ইসলাম বিদ্বেষী পোস্ট মুছা শুরু করলেন। আপনার শাশ্রুবিহীন গালের মত একদম ক্লিন হয়ে গেল আপনার ইমেজ।
আপনার দ্বিতীয় মুখটি সেদিন দেখে ফেলল মৌলবাদীরা।
যাক, আমরা এগিয়ে যাই। আপনি আবার স্লোগানে গেলেন। মুহুর্মুহু স্লোগানে রক্ত গরম করে দিলেন লাখো তরুণের। এমন সময় ঘটলো একটা ভয়ঙ্কর ঘটনা। আপনার মতই এক মুক্তমনা খুন হলেন। আপনি এদিক ওদিক তাকানোরও সময় নিলেন না। দোষ চাপিয়ে দিলেন জামাত শিবিরের ওপর। আফটার অল, ওরাও মৌলবাদী। ভাবলেন এই সুযোগ, আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করবে এই “বীর যোদ্ধার” “অভূতপূর্ব শাহাদাত”। আপনারা সবাই মিলে তাকে শহীদ বলে অ্যাখ্যা দিলেন। কিন্তু এইটা তখন আর মাথায় রাখলেন না, শহীদ কিংবা শাহাদাত একটি ভয়ঙ্কর মৌলবাদী টার্ম। যেটা জিহাদের মত সন্ত্রাসী কর্মের মাধ্যমেই লাভ করা হয়। কিন্তু তাতে কি? এই মুহূর্তে শহীদ বা শাহাদাত একটি হটকেক জিনিস। এটা ব্যবহার করাই যায়। হোক না তা ইসলামি। আপনার নাস্তিকতা আপনি আপনার পেটের মধ্যে লুকিয়ে রাখলেন আর কি। বাইরে একটু ইসলামি কায়দা দেখালে মন্দ না। পাবলিক হেভি খায়।
কিন্তু আবার সেই বিপদ। মৌলবাদীরা আবার ক্ষেপলো। এবার বলে কাফিরদের শহীদ বলা যাবেনা। কি মুশকিল। এরা ভারি পেইন দেয় দেখি। আপনি আবার ব্লগ ফেবুতে ঢুকলেন। দেখে তো আপনি থ! এলাহী কারবার। আপনার সদ্য শহীদ মুক্তমনা বন্ধুর “আমলনামায়” ফেবুতে ছড়াছড়ি অবস্থা। সব মছলমান খালি শেয়ারের উপরে আছে। আপনি আবার চিন্তায় পড়লেন। কি করা যায় ভাবতে না ভাবতেই আবার বিপদ। এবার মৌলবাদীরা বলছে অমুসলিম কাফির দের জানাজা পড়ানো যায় না। ইসলামে নাকি নিয়ম নাই। কি মুশকিল। আপনি তো এই ব্যাপারটা জানতেন না। অথচ একটু আগেই চত্বরে ঘোষণা দিয়ে এলেন বাদ আছর তার জানাজা। অথচ এবারেও খেয়াল করলেন না জানাজাও একটি ইসলামি আমল। আপনি ভয়ানক ইসলাম বিদ্বেষী, কিন্তু তারপরেও এই ঘোষণা দিয়ে এলেন। এখন উপায়? এদিকে ফেবুতে চলছে আমলনামা শেয়ারের হিড়িক।
আপনি ভাবনায় পড়ে গেলেন। একদিকে চত্বরে আপনার বিপুল ভক্তকুল। সহযোদ্ধা। তাদের মধ্যে আবার বেশিরভাগই মুসলিম। তারা যদি জানতে পারে এমন টাইপের মানুষ এদ্দিন তাদের সাথে একদম খাঁটি ইমানদার হয়ে মিশে ছিল, তাহলে তো প্রব্লেম। শত হোক, ভাবমূর্তি বলে একটা বিষয় আছে। ভাবতে ভাবতে আর যখন কিছু মাথা দিয়ে বের হচ্ছিলনা,
তখন আপনি আবার পল্টি নিলেন।
দায়িত্ব নিলেন শহীদ বন্ধুকে খাঁটি মুসলিম বানানোর। পোস্টের পর পোস্ট ফেললেন, যে এই ব্যক্তির আমলনামা ভুয়া। রাতারাতি কে বা কারা এই কাজ করেছে। সে খাঁটি মুসলিম এবং ইমানদার। জুম্মার নামায পড়েই সে বের হইসিলো। তাই তার জানাজা পড়া যাবে। ফাতওয়া দিলেন।
আপনি আবার বিজয় দেখলেন। পাবলিক টোপ গিললো। তারাও আপনার সাথে স্বর মেলালো। জি ভাই! মৌলবাদীরা একেকটা পো। আপনি এবার বিনা যুদ্ধে বিজয়ী হলেন। “সহীহ” ইসলামি কায়দায় বন্ধুর জানাজা পড়লেন। ইমাম সাহেব মাগফেরাতের দুয়া করলেন। আপনি একপাশে দাঁড়িয়ে তখন মুচকি হাসলেন। বেকুব মোমিন।
আবার আপনার দ্বিতীয় মুখটি দেখে ফেলল মৌলবাদীরা।
প্রিয় মুক্তমনা। আপনি ও আপনার বন্ধু আজীবন বলে গেছেন ধর্ম একটি গোঁড়া আর মানবসৃষ্ট হেলুসিনেশান। এটাকে সমাজ থেকে বিতাড়িত করতে হবে। কিন্তু আপনার বন্ধু মারা যাবার পর এটা আপনি কি করলেন? সেই গোঁড়া হেলুসিনেশানের মাধ্যমে তাকে সৎকার করলেন? আপনার বন্ধু কি আপনাকে বলে গিয়েছিল যে আমি মরলে আমি আস্তিক হই যামু, আমার জানাজা দিস। হেলুসিনেশান মাঝে মাঝে ভালা। এই টাইপ কিছু? তাহলে কেন করলেন? কেন আপনার বন্ধু আজীবন যেই আদর্শের ওপর দন্ডায়মান ছিলেন, যেই আদর্শের বলে ধর্মগ্রন্থকে চটি বই বলে বিশেদগার করে গেলেন, যেই আদর্শের মহত্ত্বে মহীয়ান হয়ে তিনি রাসূলকে [সাঃ] প্রতিদিন রুটিন করে গালি দিতেন, তাকে কেন মৃত্যুর পরেও সেই আদর্শে দন্ডায়মান থাকতে দিলেন না? কেন? কি অধিকার ছিল আপনার কারো আদর্শ ছিনিয়ে নিয়ে অন্য আদর্শ চাপিয়ে দেবার? সে তো মৃত ছিল, প্রতিবাদ করতে পারেনি, মুখ খুলতে পারেনি। এটাই ছিল কারণ? এই আপনার মানবতাবাদ? একটা মানুষকে মৃত্যুর পর তার সবচে ঘৃণার আদর্শের চাদরেই তাকে ঢেকে দিলেন? কেন?
আমি জানি আপনি অনেক উত্তর রেডি করে ফেলেছেন ইতোমধ্যে। সেসব উত্তর আমার প্রায় দাড়ি কমা সহ মুখস্ত। তাই সেসব আমি জানতে চাইনা। তবে যেটা আসল উত্তর, যেটা অমোঘ সত্য, যেটা আপনি লুকিয়ে রেখেছেন আপনার তথাকথিত মানবতাবাদের আদর্শের ঝুলিতে, সেটা আমি আপনাকে বের করে দেখাতে চাই।
এবং সেটা হল আপনি একজন হিপোক্রিট। আপনি একজন সুবিধাবাদী। আপনি একজন ভন্ড। আপনি দুমুখো সাপ। আপনার সমগ্র জীবনে দ্বিমুখী নীতির ছড়াছড়ি। আপনার পল্টিবাজির ক্ষমতা পুরস্কার পাবার যোগ্য। আপনি ধর্মব্যবসায়ী। আপনি ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করেন। আপনি যাদের আজীবন বলে গেছেন ধর্মব্যবসায়ী, তাদের সাথে আপনার এক চুল পরিমাণ পার্থক্য নেই। যদি ধর্মকে ব্যবহার করে নিজের উদ্দেশ্য হাসিল আর নিজেকে বাঁচানোর ব্যবস্থা করাকে ধর্মব্যবসা বলে, তবে আপনি শুধু ব্যবসায়ীই নন, একজন সফল মার্চেন্ট। যদি সত্যি আপনি ব্যবসা না করতেন তবে কখনই আপনারা বিভিন্ন ব্লগের সমস্ত ইসলামবিরোধী পোস্ট হঠাৎ করেই গণ-ডিলিট শুরু করে দিতেন না। আপনার নিজেদের ফেসবুক আইডি থেকে নোট সরিয়ে ফেলতেন না। এক মুখে ইসলামকে গালি দিয়ে অন্য মুখে আরেক নাস্তিকের জানাজার দাবি তুলতে পারতেন না। ফারাবীর মত নিরীহ টাইপের ছেলেটাকে হিজবুত তাহরীর অ্যাখ্যা দিয়ে এই হত্যাকান্ডের পিছে তার হাত আছে দাবি করতে পারতেন না। আর কি উত্তর থাকতে পারে আপনাদের এইসব কর্মের? কেন শাহবাগ বিপ্লবের আগে এইসব পোস্ট ব্লগ থেকে ডিলিট হতনা? কেন আপনাদের ফেসবুক নোট থেকে রাসূলের [সাঃ] নামে গালি দেয়া পোস্ট শাহবাগ বিপ্লবের আগে ডিলিট না হয়ে পরে ডিলিট হয়? কেন স্বঘোষিত এক নাস্তিককে জাতীয় পত্রিকায় মুমীন বান্দা দাবি করা হয়? এই আপনাদের আইডিওলজি? এই আপনাদের বিশ্বাস? মুক্তমনা-ত্ব? এই আপনাদের আদর্শ? যেই আদর্শ মরার পরে কর্পূরের মত উড়ে যায়? যেই আদর্শের কথা বুক ফুলিয়ে মৃত্যুর পর বলা যায়না? জাতীয় পত্রিকায় বলা যায়না? এই আপনাদের আদর্শ? এ কেমন নাস্তিকতা? যেই নাস্তিকতা নিয়ে মরতে লজ্জা লাগে, সে নাস্তিকতা নিয়ে বেঁচে থাকেন কি করে? লজ্জা হয়না? এতটুকু হায়াও কি নেই?
আপনি পেরেছেন। শাহবাগ, প্রেসক্লাব, সকল স্থানের মুসলিম বা অমুসলিম সবাইকে আপনি ধোঁকা দিতে পেরেছেন। খুবই পরিকল্পিত উপায়েই পেরেছেন। সরল মনের তরুণদের আবেগকে ব্যবহার করে আপনি আবার দাঁড়িয়ে গেছেন মঞ্চে। আবার দেবেন স্লোগান।
মৌলবাদীরা তাকিয়ে রবে। এক দলা থুথু নিয়ে।
ইতি
একজন মৌলবাদী